ঢাকা: প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান ফারাক্কা চুক্তি ও বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, এই দুই বিষয়ই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এবং দেশের জনগণের জীবনযাত্রার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত একটি আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভাটিতে ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ড: বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের কফিনে পেরেক’ শীর্ষক বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
ফারাক্কা চুক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে, সরকারকে কিন্তু নড়েচড়ে বসতে হবে এমন মন্তব্য করে প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান বলেন, শেখ মুজিবর রহমানের আমলে যে ৫০ বছরের চুক্তি (ফারাক্কা চুক্তি) হয়েছিলো সেটি কিন্তু এই বছরই শেষ হয়ে যাচ্ছে; কয়েকদিন পরেই।
চুক্তি শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশের পানি সংকট আরও তীব্র হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে সরকারকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে নজর দিতে হবে। ভবিষ্যতে ছেলে মেয়ে পানি পাবে কিনা সেটা দেখতে হবে। কেবল অতীতমুখীতা নয় আমাদের সামনের দিকে তাকাতে হবে। সুতরাং এই সরকারকে কিন্তু নড়েচড়ে বসতে হবে।
প্রবীণ এই সাংবাদিক বলেন, বর্তমান সরকারের কাছে অনুরোধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে পানি লাগবে। সুতরাং আপনারা তাড়াতাড়ি সেখানে যান।
শফিক রেহমান বলেন, আন্তর্জাতিক ফারাক্কা বাঁধ কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ টিপু সুলতান কিন্তু বলছেন আরেকটি কথা। সেটা হচ্ছে, বাঁধের থেকে এখন আরও বড় বিপদ হচ্ছে ভারতের যে ৫৬টা নদীর পানি এখানে এসে পৌঁছায় সেই ৫৬ নদীর পানির সংযুক্তির ফল। আগে ফারাক্কা বাঁধ ছিল এখানে কতখানি পানি এলো সেটার কিউসেক বণ্টন নিয়ে চুক্তি হয়েছে। কিন্তু এখন এখান থেকে পানি চলে যাচ্ছে সারা ভারতে। সুতরাং পদ্মা বা তিস্তা না আরও নদী শুকিয়ে যাবে। সেটার জন্য আপনাদের এখন থেকেই কাজ করতে হবে। তাই আমি উপদেষ্টাদের অনুরোধ করছি তারা যেন বাঁধ দেখেন। কারো কথা শুনবেন না, আপনারা যান সেখানে। তরুণরাও যান সেখানে, ফারাক্কা বাঁধ কতটা ক্ষতিকর হতে পারে বাংলাদেশের জন্য সেটা দেখুন। আর আপনারা (সরকার) যে নতুন চুক্তি করবেন সেটা বিবেচনা করে করবেন।
শফিক রেহমান বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়ায় সরকারের ধীরগতির সমালোচনা করে, এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীদের দ্রুত বিচার করে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পরে আজকে যারা বেঁচে আছেন, যাদের আত্মীয় স্বজনরা আছেন তারা যেন আত্মমর্যাদা ফিরে পায় সেটাও দেখতে হবে আমাদেরকে। শুধু আর্থিক নয়, শারীরিক নয়, মানসিক নয় তারা যেন আত্মমর্যাদা ফিরে পায় সেদিকে দেখতে হবে; এটা আমার অনুরোধ।
শেখ হাসিনাকে একজন খুনি অভিহিত করে এবং তার বিচার না করেই আইন উপদেষ্টাকে রায় দিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে শফিক রেহমান বলেন, শেখ হাসিনা একজন মজ্জাগতভাবে খুনি। অহরহ তিনি শুধু খুনের কথা ভাবেন। এতো বিচারের দরকার কি? রায় দিয়ে দিলেই পারেন। আমি আইন উপদেষ্টাকে বলতে চাই এতো বিচার করতে যাবেন না। কারণ তিনি শেখ হাসিনা, কি করতে পারেন এটা আমার ভালোই ধারণা আছে। তিনি গ্লিসারিন দিয়ে কান্না করবেন আর কান্না দেখে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় গলে যাবে। আমার ভয় হয়, তাকে এখানে আনা মানে আরেকটা প্রহসন আরেকটা তামাশা। আমরা জানি তিনি খুন করেছেন। তার রায় দিয়ে দিন এখনই। কোনো দরকার নেই দীর্ঘায়িত করার।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) আমিনুল করিম, রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিনার রশীদ, নিহত বিডিআর সদস্যের সন্তান অ্যাডভোকেট আব্দুল আজিজ, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে নিহত সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী সানজানা সানিয়া জোবাইদা, বিডিআর কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মো. ফয়েজুল আলম, সার্বভৌমত্ব আন্দোলনের কেন্দ্রী সংগঠক মো. শামীম রেজা, ফুয়াদ সাকী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আয়াতুল্লাহ বেহেস্তি। এছাড়াও বিডিআর হত্যাকাণ্ডে নিহত পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪
ইএসএস/এসএএইচ