মাদারীপুর: প্রতিবেশী কিশোরীর সঙ্গে প্রথমে প্রেম, এরপর একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক থেকে অন্তঃসত্ত্বা। পরে বিয়ে করতে অস্বীকার ওই প্রেমিকের।
অভিযুক্ত প্রেমিকের নাম পিয়ার সরদারের (১৯)। শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের বাবলাতলা এলাকার আবুল কালাম সরদারের বড় ছেলে তিনি।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের বাবলাতলা কাইমুদ্দিন শিকদার কান্দি গ্রামে কিশোরীর আত্মহননের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
এই ঘটনায় প্রধান সালিশকারী ইউপি সদস্য ও অভিযুক্তসহ ১০ জনের নামে থানায় মামলা করেছে মেয়েটির পরিবার।
জানা গেছে, দেড় বছর আগে বাবলাতলা জুনিয়র স্কুলের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী হাফিজা আক্তারের সঙ্গে প্রেম হয় পিয়ার সরদারের । দুজনের শারীরিক সম্পর্ক হলে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। পরে পিয়ার সরদার বিয়ের আশ্বাস দিলে সম্প্রতি ওই শিক্ষার্থীকে গর্ভপাতও করানো হয়। এরপরই পিয়ার শুরু করে টালবাহানা।
বিষয়টি নিয়ে পিয়ারের পরিবারকে জানালে হাফিজাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায় আবুল কালাম। পরে বেশ কয়েকবার মেয়েটির পরিবার মীমাংসার জন্য চেষ্টা চালায়। অবশেষে গত মঙ্গলবার দ্বিতীয়বারের মতো বিকেলে প্রতিবেশী বাড়ির উঠানে আয়োজন করা হয় সালিশ-বৈঠকের। এতে দত্তপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোতাহার হোসেন, স্থানীয় মাদবর উজ্জ্বল খান, তাজেল মাদবর, জাহাঙ্গীর খাঁসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে অভিযুক্ত পিয়ার সরদার বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার কারণে ঘটনা অন্য খাতে নিতে মেয়েটির সঙ্গে পিয়ারের ছোট ভাই আলীর বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সালিশকারীরা। বিয়ে না হলে অভিযুক্তের ১০ লাখ টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে শুরু হয় হট্টোগোল। এরপর সেখান থেকে চলে যান সালিশকারীরা। এই ঘটনায় অপমানে ও ধর্ষণের ন্যায় বিচার না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে মেয়েটি।
শিবচর থানা সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনায় মেয়েটির বড়ভাই নাসির মোল্লা বাদী হয়ে শিবচর থানায় প্রধান সালিশকারী ইউপি সদস্য ও অভিযুক্ত পিয়ারসহ ১০ জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার পর এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত পিয়ার হোসেন। এদিকে শুক্রবার সকালে জেলা সদর হাসপাতালে নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।
আত্মহননকারী হাফিজার ছোট ভাই সজীব মোল্লা বলেন, দত্তপাড়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোতাহার হোসেন, স্থানীয় মাদবর উজ্জ্বল খান, তাজেল মাদবর, জাহাঙ্গীর খাঁসহ অনেকেই উপস্থিত থেকে এই সালিশ-বৈঠকের আয়োজন করে। সালিশকারীরা টাকা-পয়সা খেয়ে তাদের মত করে সিদ্ধান্ত নেয়। এটা আমরা ও আমার বোন মেনে নিতে পারিনি। তাই লজ্জায় আত্মহত্যা করেছে আমার বোন। আমরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার বিচার চাই।
শিবচরের দত্তপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোতাহার হোসেন বেপারী বলেন, আমরা ৭-৮ জন সালিশীতে অংশ নিই। দুইপক্ষের কথা শুনে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করি। কিন্তু মেয়েটি বলছে পিয়ারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল কিন্তু পিয়ারের ছোটভাই আলী দাবি করে তার সঙ্গে মেয়েটির প্রেম ছিল। এটি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে আর সমাধান হয়নি। পরে সবাই যার যার মতো করে সালিশ থেকে চলে যাই।
আরেক সালিশকারী উজ্জ্বল খান বলেন, আমরা সালিশে সব কিছু শুনেছি। এখানে মেয়েটির সাথে পিয়ার আর ছোট ভাই আলী দুজনের সম্পর্কের কথা উঠলে বিষয়টি জটিল রূপ নেয়। তবে মেয়েটি পিয়ারের সঙ্গে সম্পর্কের কথা জোর দিয়ে জানায়। কোনো সিদ্ধান্তে যাওয়ার আগে আমরা একটু সময় নিই। এজন্য কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়েই ওই দিনের মতো সালিশ শেষ করা হয়। কিন্তু সন্ধ্যার পর শুনি মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোকতার হোসেন জানান, স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। আর নিহতের ময়নাতদন্তও সম্পন্ন হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০২৫
এসএএইচ