ঢাকা: অবৈধভাবে চাঁদনী চক বিজনেস ফোরামের কমিটি ভেঙে দিয়ে সমাজ সেবা অধিদপ্তর প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির নেতারা।
তাদের দাবি, সংগঠনের সদস্য পদ হারানো একজন ব্যক্তির কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তা অসত্য তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে।
রোববার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন চাঁদনী চক বিজনেস ফোরামের নেতারা।
ফোরামের সভাপতি নিজাম উদ্দিন বলেন, ২০১৭ সালে চাঁদনী চক বিজনেস ফোরামের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৭ সাল থেকে পর পর তিনবার নির্বাচিত হয়ে আমরা মার্কেটের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের একটা প্রতিপক্ষ আছে, যে প্রতিপক্ষ কখনো নির্বাচনে আমাদের সঙ্গে পারে না। যে কারণে তারা সব সময় কিছু বহিরাগত লোকজন এনে মার্কেটে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করে।
তিনি বলেন, সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৫ জুলাই আমাদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে আমাদের ২৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি পাশ করে। তখন প্রতিপক্ষ সেই ফলাফল মেনে নেয়। কিন্তু সরকারের পট পরিবর্তনের পর হঠাৎ করে সমাজ সেবা অধিদপ্তর অন্যায়ভাবে আমাদের কমিটি বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। অথচ, আমাদের কমিটির মেয়াদ ২০২৬ সালের ২৫ জুলাই পর্যন্ত।
তিনি আরও বলেন, উনারা (সমাজ সেবা অধিদপ্তর) মনগড়া একটি প্রতিবেদন তৈরি করে আমাদের কোনো ধরনের নোটিশ না দিয়েই কমিটি বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। এটা করা হয়েছে আইন বহির্ভূতভাবে। আমাদের ভোটার ৬০০ জনের মতো। ৪০৯ জন সদস্য লিখিত দিয়েছে তারা প্রশাসক চান না। নির্বাচিত কমিটি দ্বারা মার্কেট পরিচালিত হোক সেটাই চান তারা। এ কারণে প্রশাসককে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
নিজাম উদ্দিন আরও বলেন, বিষয়টি এখন উচ্চ আদালতে চলে গেছে। আদালতের কাছে আমরা ন্যায্য বিচার চাই। সমাজ কল্যাণ অবৈধভাবে আমাদের কমিটি ভেঙে দিয়েছে। এটা যেন প্রত্যাহার করা হয়, সেটাই আমাদের দাবি।
অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে পরাজিত হওয়া একজন দীর্ঘদিন ধরেই মার্কেটে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। অনৈতিক কাজে জড়িত থাকায় ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে চাঁদনী চক বিজনেস ফোরাম থেকে তার সদস্য পদ স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের পট পরিবর্তন হওয়ার পর তার সুযোগ নিয়ে সদস্য পদ স্থগিত হওয়া ওই ব্যক্তি সমাজ কল্যাণের কিছু কর্মকর্তাকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে অসত্য তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তার ভিত্তিতেই পুরো কমিটি ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সমাজ কল্যাণের একটা আইন আছে। সেই আইন অনুযায়ী, তারা কমিটি ভেঙে প্রশাসক বসাতে পারেন না। তাছাড়া আমাদের সংগঠনের সদস্য পদ হারানো একজন সমাজ কল্যাণের কাছে আবেদন করেন তার সদস্যপদ বহাল রাখার জন্য। কিন্তু সমাজ কল্যাণ তার সদস্য পদ বহাল রাখার জন্য আমাদের কিছু না বলেই, পুরো কমিটি ভেঙে দিয়েছে। এটা তো সমাজ কল্যাণ করতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলন থেকে দাবি করা হয়, চাঁদনী চকে প্রায় ৬০০ দোকান মালিকের শত কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। ৫-১০ জন দোকান মালিকের সহায়তায় সমাজ কল্যাণের দুয়েকজন কর্মকর্তার মাধ্যমে অসত্য তদন্তের ভিত্তিতে নির্বাচিত কমিটি বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগের এই ধ্বংসের খেলা বন্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে তাদের আরও যেসব দাবি জানানো হয়-
১. ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ থাকলে সাধারণ দোকান মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবসায়ীরাই তার সমাধান করবেন।
২. ব্যক্তি মালিকানা মার্কেট পরিচালনা কমিটি মালিকদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিতরাই পরিচালনা করবে। প্রশাসক নিয়োগ সাধারণ দোকান মালিকরা কখনই চায় না।
৩. প্রশাসক ও বহিরাগত মুক্ত করে মার্কেট পরিচালনার দায়িত্ব দোকান মালিকদের হাতেই রাখতে হবে।
৪. নির্বাচিত কমিটিকে মেয়াদ পূর্তি পর্যন্ত স্বাধীনভাবে মার্কেট পরিচালনার সুযোগ দিতে হবে।
৫. মার্কেট পরিচালনা কমিটি দোকান মালিকদের একটি অ-রাজনৈতিক মার্কেট পরিচালনা কমিটি। আমরা এখানে কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অজুহাতে মার্কেট দখলের পায়তারা হতে নিরাপত্তা চাই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. মনির হোসেন হাওলাদার ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আমীর হোসেন রোমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম শেখ, কোষাধ্যক্ষ মো. জয়নাল আবেদীন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মো. আব্দুর রাজ্জাক রিপন, সহ-কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রহিম, ক্রীড়া সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক চিশতী, দপ্তর সম্পাদক জামাল আহমেদ মাসুম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২৪
এমএমআই/এমজে