চাঁদপুর: একটি সন্তানের জন্যে পৃথিবীর সবচাইতে নিরাপদ স্থান হচ্ছে তার বাবা-মা। সন্তানের জন্ম থেকে শুরু করে জীবন যৌবনের প্রতিটি মুহূর্তে ঢাল হয়ে পাশে থাকেন বাবা-মা।
অযত্নে অবহেলায় বেড়ে ওঠা আমাদের সমাজের আশপাশে অনেক ছোট ছোট এতিম, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত শিশু রয়েছে। নেই তাদের বাবা-মা এবং নিজের ঠিকানা। পায়নি তাদের নিজ নিজ অধিকার। আর সেইসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে এবং তাদের বাবা-মায়ের মতো আদর ভালোবাসা দিয়ে নিজ ঠিকানায় নিয়ে এলেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন। অযত্নে অবহেলায় বেড়ে ওঠা এতিম-অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত অর্ধশত শিশু পেল নতুন ঠিকানা শিশু পুনর্বাসনকেন্দ্র।
সরকারের নির্দেশনায় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনের সহযোগিতায় এবং জেলা সমাজসেবার তত্ত্বাবধানে চলতি মাসে উদ্বোধন হলো ১০০ শয্যা বিশিষ্ট সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র (বালিকা)। যেখানে অসহায় ও এতিম শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য পেয়েছে নিজ ঠিকানা তেমন পেয়েছে সব ধরনের সুবিধা। পেয়েছে নিজ অধিকার।
কথা হয় নতুন ঠিকানা পাওয়া শিশু ছোঁয়া আক্তার মীম, সামিয়া, ফাহমিদা ও রীমা আক্তারের সঙ্গে। যাদের প্রত্যেকের বয়স ৮-১২ বছর। তারা খেলার ছলে ও হাসিমুখে প্রতিবেদককে জানায়, এখানে সবাই আমাদের আদর করে, খেলতে দেয় এবং পড়াশুনা করতে দেয়। আগে এসব কিছুই পেতাম না। এখানে আমাদের অনেক বন্ধু হয়েছে। আমরা একসঙ্গে পড়াশোনা করতে পারি। ভালো লাগে এখানকার সবাইকে।
প্রতিষ্ঠানের সার্বিক বিষয় প্রসঙ্গে উপ প্রকল্প পরিচালক সৈয়দা হাসিনা বেগম বলেন, আমরা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শিশুকে অত্যন্ত যত্ন সহকারে পরিচর্যা করে থাকি। আমরা শিশুদের নিজের সন্তানের থেকেও বেশি গুরুত্ব দেই। তাদের বেড়ে ওঠার প্রত্যেকটি সময় আমরা খেয়াল রাখি যেন কোনো রকমের কমতি না হয়।
কথা হয় জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, সমাজে আসলে এমন অনেক শিশু রয়েছে যারা বাবা মার আদরসহ সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তৈরি হওয়া এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা সেসব শিশুদের অভিভাবক পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।
তিনি আরও বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে তারাই থাকতে পারবে যাদের এ সমাজে বাবা-মা বা নিকটতম আত্মীয়-স্বজন বেঁচে নেই। যাদের বাবা-মা ছাড়াও নিকটতম আত্মীয় স্বজন রয়েছে সেসব শিশুদের আমরা তাদের নিকটতম আত্মীয়-স্বজনদের কাছে কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে দিয়ে দেব। প্রয়োজনে আমরা তাদের কিছু দায়িত্ব নেব। আমরা চাইবো তারা নিজ পরিবারের কারো না কারো থেকে তাদের অভিভাবকত্ব পাক।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন প্রতিবেদককে বলেন, আসলে আমরা চাই না সমাজে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থাকুক। কারণ বাবা মায়ের আদর ভালোবাসা কেউ পূরণ করতে পারবে না। যার বাবা-মা নেই, সে জানে তার মর্ম কি। বাবা-মা ছাড়াও নিজ পরিবারের আত্মীয় স্বজনদের মাঝে থেকে বেড়ে ওঠা আর পুনর্বাসন কেন্দ্রে বেড়ে ওঠার মধ্যে অনেক পার্থক্য।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, সমাজের অনেক শিশু রয়েছে যারা অযত্নে অবহেলায় নিজ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে বেড়ে উঠছে। শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতেই সরকার সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে সুরক্ষা দিচ্ছেন। আমি বিশ্বাস করি সুবিধাবঞ্চিত পথ শিশু বা এতিম শিশুদের একটা আশ্রয়স্থল হয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২৫
আরএ