ঢাকা, সোমবার, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

রিকশা চালকের মাথায় হেলমেট!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৫
রিকশা চালকের মাথায় হেলমেট! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাগেরহাট: দেশে জুড়ে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় জনমনে আতঙ্ক যেন কাটছেই না। তাইতো সহিংসতা বা নাশকতা থেকে বাঁচতে হেলমেট পরে রিকশা চালাতে দেখা গেছে ফকরুল নামে এক যুবককে।

    

বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ সরকারি পিসি কলেজ প্রঙ্গণে হেলমেট পরে রিকশা চালাতে দেখা যায় ফকরুলকে। দুপুরে ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে কলেজের বেশ কিছু শিক্ষার্থীর দৃষ্টি কাড়ে বিষয়টি।

১০ম জাতীয় সংদস নির্বাচনের এক বছরকে কেন্দ্র করে দেশ জুড়ে বিএনপিসহ ২০দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চলছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হরতাল।

টানা অবরোধের প্রভাব পড়ছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাপনে।   যদিও রাজনীতিবিদরা প্রতিনিয়ত বলছে, এ সাধারণ মানুষের জন্যই তাদের রাজনীতি। কিন্তু প্রতিনিয়ত তার রাজনীতির বলি হচ্ছে সাধারণ জনগণ।

ক্ষমতা রক্ষা কিংবা ক্ষমতায় যাবার জন্য রাজনীতিবীদদের এমন দ্বন্দ্ব আর সংঘাতে তাদের কিছু না হলেও প্রান্তিক খেটে খাওয়া মানুষগুলো পড়েছে চরম বিপাকে। বিশেষ করে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা যাদের, তাদের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়।

বেচেঁ থাকতে হলে উপার্জন চাই। কারণ উপার্জন না হলে দু’বেলা আহার জোটেনা তাদের। তাই তো নাশকতা কিংবা নানা সঙ্কা থাকলেও জীবনের প্রয়োজনে পথে না বেরিয়ে উপায় নেই তাদের।

কিন্তু পথে বেরোলেই পেট্রল বোমা, ককটেল কিংবা হামলার শিকার হবার ভয় থেকে রক্ষা নেই তাদের কারোই।

তবে এমন ভয় নিয়ে বেঁচে থাকার উপায় নেই, ফকরুলের মতোন রিকশা চালকদের। কারণ একদিন তার উপার্জন না হলে হাঁড়ি চলেনা তার ৭ সদস্যের পরিবারে। জোটেনা বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসার খরচ।

তাইতো চলমান পরিস্থিতিতে নিজের নিরাপত্তা আর অবরোধ হরতালকারীদের হামলা থেকে বাঁচতে মাথায় হেলমেট পরেই রিকশা চালাচ্ছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ সরকারি পিসি কলেজ প্রঙ্গণে হেলমেট পরে রিকশা চালাতে দেখা যায় ফকরুলকে। দুপুরে ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে কলেজের বেশ কিছু শিক্ষার্থীর দৃষ্টি কাড়ে বিষয়টি।

কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র সাইফুল ইসলাম নোবেল তার মোবাইলে ফ্রেম বন্দি করে হেলমেট পরে রিকশা চালানোর বিষয়টি।

রিকশা চালকের সঙ্গে কাথা বলা সাইফুল ইসলাম নামে ওই শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, মাথায় হেলমেট পরিহিত ওই চালকের নাম ফকরুল। আমি ছবি তুলতে গেলে তিনি একটু রেগে যান। আমাকে বলেন উপহাস করেন না। পেটের দায় আজ রিকশা চালাই। বাড়িতে অসুস্থ মা। বউ-বাচ্চা আর পরিবার দেখা লাগে। কাজ না করলে খাব কি। আর কাজ করতি হলি তো আগে বাঁচাতি হবে।

কলেজ সংলগ্ন বাগেরহাট পৌর শহরের হরিণখানা এলাকার মিজান স্টোরের সত্ত্বাধীকারি মিজানুর রহমানের দৃষ্টি কাড়ে বিষয়টি।

রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অবরোধ-হরতালের সহিংসতার বিষয় বাংলানিউজকে তিনি বলেন, দু’দল সাধারণ মানুষের রইয়ে খেলা শুরু ওরিছে (খেলায় মেতেছে)। ক্ষমতার জন্নি (জন্য) পুড়ায় মারতিছে মানুষ জোন। আমরা শান্তি চাই, কাজ কইরে বাঁচতি চাই। এমন রাজনীতি আর আন্দোলন আমাগো লাগবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।