ঢাকা: রত্না আক্তারকে নিয়ে মাত্র তিন বছর আগে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা গাউসিয়া এলাকায় সংসার শুরু করেছিলেন ফুটপাতের জুতা ব্যবসায়ী খোকন। এর দুই বছরের তাদের মাথায় ঘর আলো করে জন্ম নেয় প্রথম ও একমাত্র কন্যা সন্তান উনাইশা।
এ কাজ করে ভালোই কাটছিল দরিদ্র পরিবারটির দিন। কিন্তু শুক্রবার রাতে যাত্রাবাড়ীতে বাসে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনা এলোমেলো করে দিলো তাদের সুখের সংসার।
গুলিস্তানে জুতা বিক্রি শেষে বাসে করে বাসায় ফেরার পথে পেট্রোল বোমা হামলায় গুরুতর আহত হন খোকন। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শ্বাসনালীসহ শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
খোকনের বাড়ি নোয়াখালী জেলার মেঘনা থানার চালিভাঙ্গা গ্রামে। তার বাবার নাম আবুল বাশার।
জুতা বিক্রেতা খোকনের নিকটাত্মীয়রা তার বোমায় দগ্ধ হওয়ার খবর শুনে ঢামেকে ছুটে এলেও প্রথমে সংবাদটি খোকনের স্ত্রী রত্নাকে জানায়নি। স্বামী রাতে বাড়ি না ফেরায়, রত্মা আত্মীয়-স্বজনের বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নেন।
পরে তিনি জানতে পারেন, তার স্বামী বাসে পেট্রোল বোমা হামলায় দগ্ধ হয়েছেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি।
খবর পেয়ে একবছরের শিশু কন্যাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন রত্মা আক্তার।
বার্ন ইউনিটের দ্বিতীয় তলায় স্বামীকে দগ্ধ অবস্থায় দেখে কাঁদতে কাঁদতে পাগলপ্রায় তিনি। কোলে থাকা শিশু উনাইশা মায়ের কান্না দেখে চিৎকার করে কাঁদছিলো। মা-শিশু দু’জনের কান্নার শব্দ শুনে দগ্ধ খোকন কথা বলতে না পেরে গোঙাতে থাকেন।
কান্নারত রত্না বলেন, দীর্ঘদিনের অবরোধ-হরতালে জুতা বিক্রি হচ্ছিল না। তাই তার স্বামী গতকাল (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে না খেয়ে খালি পেটেই বের হয়ে যান। যাওয়ার সময় বলেন, ‘জুতা বিক্রি হলে ফেরার পথে বাজার করে নিয়ে আসবো। ’
বাংলানিউজের সঙ্গে এসব কথা বলতে গিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, হায়! আমার কি হবে! আমার সন্তানের কি হবে! আমাদের কে দেখবে?
বার্ন ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক শ্যামন্ত লাল সেন বাংলানিউজকে জানান, শনিবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট ৫১ জন দগ্ধ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে ১১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শুক্রবার (২৩ জানুয়ারি) যাত্রাবাড়ীতে বাসে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনায় দগ্ধদের মধ্যে ৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত দগ্ধ রোগীরা চিকিৎসা শেষ করে বার্ন ইউনিট থেকে বাসায় ফিরে যেতে পারছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের পরিপূর্ণ সুস্থ বলা যাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৫