ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

যুদ্ধে যারা পারঙ্গম

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৫
যুদ্ধে যারা পারঙ্গম ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

যুদ্ধজাহাজ ‘সমুদ্র জয়’ থেকে: শত্রু বাহিনী দেশের নৌ সীমায় ঢুকে পড়েছে। ‘শান্তিতে সংগ্রামে সমুদ্রে দুর্জয়’ এই মন্ত্রে দীক্ষিত বাংলাদেশ নৌবাহিনী সমুদ্র সীমাকে শত্রুমুক্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়লো।

নৌবাহিনীর মিসাইল বোট স্কোয়াডের জাহাজ ‘উত্তাল’ ও লার্জ পেট্রোল ক্রাফট ‘দুর্জয়’ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে শত্রুবাহিনীর জাহাজের ওপর ছোঁড়া হলো মিসাইল। পরপর দুটি মিসাইলে বিধ্বস্ত হলো শত্রুর অবস্থান।
 
এবার শত্রু পক্ষ বিমান আক্রমনের সাহায্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ওপর আক্রমণ রচনার চেষ্টা চালাতে ছুটে এলো। দেশের বৃহৎ যুদ্ধ জাহাজ ‘সমুদ্র জয়’ থেকে ৬ কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম শোল্ডার লঞ্চ সারফেস টু এয়ার মিসাইল নিক্ষেপ করা হলো। ধ্বংস করা হলো শত্রুর যুদ্ধ বিমান। শত্রুর সাবমেরিন ধ্বংস করতে নৌবাহিনীর ‘নির্ভয়’ যুদ্ধ জাহাজ থেকে আরডিএস (রকেট ডেপথ চার্জ) ফায়ারিং করা হলো। আরডিএস সাবমেরিন বিধ্বংসী সমরাস্ত্র। এই আরডিএস ফায়ারিংয়ের ফলে পানির নিচে প্রবল চাপ সৃষ্টি হয়, যা পানির নিচে অবস্থানরত শত্রুপক্ষের সাবমেরিন ধ্বংস করতে অত্যন্ত অত্যন্ত কার্যকর।    

ওপরের এসবই নৌবাহিনীর বার্ষিক মহড়া ‘এক্সসারসাইজ সি থান্ডার’ এর অংশ বিশেষ।

undefined



মঙ্গলবার (২৭ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম থেকে ৬০ নটিক্যাল মাইল গভীর সমূদ্রে নৌবাহিনীর এই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। সমুদ্র দুর্জয়ে বসে এই মহড়া প্রত্যক্ষ করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব, প্রতিরক্ষা সচিব হাবিবুল আউয়াল, সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূঁইয়া, বিএন ফ্লোটিলার কমডোর এম খালেদ ইকবালসহ সামরিক বেসামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।   

এরপর সমুদ্র জয় থেকে ছোঁড়া হয় কামানের গোলা। ভেসেল বোর্ড সার্চ এন্ড সিজার মহড়ায় অংশ নেয় নৌ কমান্ডোরা। এই মহড়াতে সন্দেহজনক বাণিজ্যিক জাহাজে নৌ কমান্ডোরা কিভাবে অভিযান পরিচালনা করে তা দেখানো হয়। নৌবাহিনীর সোয়াডস কমান্ডোরা দ্রুতগামী চারটি ডিফেন্ডার বোটের মাধ্যমে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দিক থেকে এসে জাহাজে ওঠে এর নিয়ন্ত্রণ নেয়। এসব বোট সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম।

সমুদ্রে চলমান জাহাজের হেলিকপ্টার ডেকে চলন্ত হেলিকপ্টারের অবতরণের মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। সবশেষে ফ্লিট রিভিউয়ে মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট, হেলিকপ্টার, ১৫টি যুদ্ধ জাহাজ ও ৬টি বোট সমুদ্র জয়ে অবস্থানরত রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে সালাম জানায়। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের মহড়া।   

undefined

     

দীর্ঘ ১৬ দিনব্যাপী এই বিশেষ সমূদ্র মহড়ার উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ দেখে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমি অভিভূত হয়েছি। আমি আজ নৌবাহিনীর অফিসার ও নাবিকদের মধ্যে যে পেশাদারিত্ব লক্ষ্য করেছি তা তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও কর্মস্পৃহা ও গভীর আত্মবিশ্বাস এবং সর্বোপরি দেশপ্রেমেরই প্রতিফলন। সেজন্য আমি নৌবাহিনী প্রধানহস মহড়ায় অংশগ্রহনকারী সকলকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংগৃহীত হওয়ার পরপরই ২০১৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর সমূদ্র জয়কে কমিশন করার সুযোগ হয়েছিল। আজ সেই জাহাজে করে নৌবাহিনীর সমূদ্র মহড়া অবলোকন করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দ অনুভব করছি। ’

বাহিনীর সর্ববৃহৎ এ মহড়ায় ব্যবহৃত হয়েছে নৌবাহিনীরি সর্বাধুনিক সব সমরাস্ত্র। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: জাহাজ থেকে উৎক্ষেপিত দূরপাল্লার সারফেস টু সারফেস মিসাইল, যা বহুদূর থেকে শত্রু জাহাজকে নিপূণভাবে ঘায়েল করতে সক্ষম।

এছাড়া এবারের মহড়ায় ব্যবহৃত হয়েছে শোল্ডার লঞ্চড সারফেস টু এয়ার মিসাইল এবং সাবমেরিন বিধ্বংসী রকেট ডেপথ চার্জ। বিভিন্ন জাহাজ হতে সারফেস ফায়ারিং এর টার্গেট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে কিলার টমেটো।

এ বছরের মহড়ায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ছোট বড় সব ধরনের যুদ্ধ জাহাজ, ঘাঁটি, নেভাল এভিয়েশন, সোয়াডস, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, কোস্ট গার্ড, শিপিং কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন মেরিটাইম সংস্থা ছাড়াও কিছু বেসামরিক জাহাজ ও নৌযান অংশ নিয়েছে।

আবদুল হামিদ বলেন, এই মহড়ায় নানা রণকৌশল এবং সর্বোপরি সফল মিসাইল ফায়ারিং দেখে অত্যন্ত আশাবাদী হয়েছি। নৌবাহিনীর বর্তমান যোগ্যতা ও সাফল্যে জাতি আজ গর্বিত ও আনন্দিত। আমি নিশ্চিত যে বাংলাদেশের জলসীমায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী তার রণকৌশল, পেশাগত দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে যেকোনো মূল্যে দেশের সার্বভৌমত্ব ও সমূদ্রসীমা রক্ষায় ‘শান্তিতে সংগ্রামে সমূদ্রে দূর্জয়’ নিবেদিত প্রাণ হয়ে থাকবে। ’ 

বাংলাদেশ সময়: ০২৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৫ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।