ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জজ মোতাহারের অনুসন্ধানে ব্যর্থ দুদক

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৬
জজ মোতাহারের অনুসন্ধানে ব্যর্থ দুদক

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দেওয়া জজ মোতাহার হোসেনের দুর্নীতির অনুসন্ধান কার্যক্রমে ব্যর্থতার পরিচয়...

ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দেওয়া জজ মোতাহার হোসেনের দুর্নীতির অনুসন্ধান কার্যক্রমে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েই যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুই বছরের বেশি সময় ধরে অনুসন্ধান চালিয়েও ওই বিচারকের বর্তমান কোনো তথ্য পায়নি রাষ্ট্রীয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।

মুদ্রা পাচারের অভিযোগে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর তারেক রহমান ও তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাটি করে দুদক। মামলার বিবরণীতে বলা হয়, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের নির্মাণ কাজ একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন মামুন।

পরে ২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ওই টাকা সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকে মামুনের হিসাবে পাচার করা হয়। যার মধ্যে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা খরচ করেন তারেক রহমান।

এ অভিযোগের ভিত্তিতে মামলার বিচার শুরু হয় ২০১১ সালের ০৬ জুলাই। ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর বিশেষ জজ-৩ মোতাহার হোসেনের আদালত তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস ও তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছর কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৪০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেন।

তখন আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও দুদকের আইনজীবী বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

দুদকের আবেদনের পর শুনানি শেষে গত ২১ জুলাই নিম্ন আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেন হাইকোর্ট। তারেকের বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সাত বছরের কারাদণ্ডও বহাল রাখেন উচ্চ আদালত।

রায়ের পর পরই বিচারক মোতাহার হোসেন অবসরে গিয়ে কাউকে কিছু না জানিয়েই গোপনে দেশত্যাগ করেন। এরপর ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে তার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক।    

ওই বছরের ২২ জানুয়ারি মোতাহার হোসেনের নামে নোটিশ জারি করে দুদক। নোটিশে পরদিন তাকে অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের লক্ষ্যে দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। মোতাহার হোসেনের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়। এ বিষয়ে স্থলবন্দর, নৌ-বন্দর ও বিমানবন্দরে কঠোর সতর্ক সংকেত জারি করে দুদক।

কিন্তু এর আগেই ফাঁক-ফোকর দিয়ে দেশত্যাগ করেন জজ মোতাহার হোসেন। তারপর থেকেই পলাতক রয়েছেন তিনি।

দুই বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও জজ মোতাহার হোসেনের বিষয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রমে সফলতা দেখাতে পারেনি দুদক। এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও করেনি।

মোতাহার হোসেনের বিষয়ে অনুসন্ধানের দায়িত্বে থাকা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বাংলানিউজকে জানান, তাদের কাছে তথ্য ছিলো, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন মোতাহার হোসেন। তবে এখন তিনি কোথায় আছেন, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই তার হাতে। অন্যদিকে তার মালয়েশিয়ায় একটি বাড়ি এবং সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যের কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ থাকার তথ্যও ছিলো দুদকের কাছে।

তিনি আরো জানান, মোতাহার হোসেন সম্পর্কে জানতে গত বছর থেকে বিদেশে চিঠি পাঠানো শুরু করে দুদক। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর মাধ্যমে প্রথমে ইন্টারপোলে চিঠি পাঠানো হয়। ইন্টারপোলে পাঠানো দুদকের ওই চিঠি মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, আমিরাত ও যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ডের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কাছেও পাঠানো হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে সম্প্রতি মালয়েশিয়া সরকারের কাছে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো হয়েছে বলেও জানান দুদকের এই কর্মকর্তা।

দুদকের সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে জানান, তাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে, এখনো শেষ হয়নি। তবে তিনি এখন কোথায় আছেন, তার নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই তাদের হাতে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৬
এসজে/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।