ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

গতবারের লাভে ফুরফুরে মেজাজে কৃষক

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১৭
গতবারের লাভে ফুরফুরে মেজাজে কৃষক মাঠে ধান রোপণে ব্যস্ত কৃষক, ছবি: আরিফ জাহান

তখনও কুয়াশায় মোড়ানো চারদিক। এরই মধ্যে বেরিয়ে পড়েছেন গ্রামের কৃষকেরা। ছুটে চলেছেন নিজ-নিজ কৃষি জমিতে। ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন জমি প্রস্তুত করতে। পাওয়ার টিলার নিয়ে পুরো জমি চষে বেড়াচ্ছেন কেউ কেউ।

আবার কেউবা রাসায়নিক সার গামলায় ভরে জমিতে ছিটাচ্ছেন। চলছে সমান তালে জমিতে ধান রোপণের কাজও।

 

এদিকে বীজতলায় ব্যস্ত আরেক দল কৃষক। ভেজা মাটি থেকে আলতোভাবে বীজ টেনে ওঠানো হচ্ছে। এরপর আ‍ঁটি করে গোড়া শক্তভাবে বেঁধে জমিতে রোপণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।  

জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলা ঘুরে রবি মৌসুমের চলতি বোরো ধান চাষ নিয়ে ক্ষেতে কৃষকের এমন কর্মযজ্ঞের চিত্র দেখা যায়। গেলো বছরের লাভ ও ধানের বাম্পার ফলনে এবারও বোরো আবাদে ফুরফুরে মেজাজে মাঠে নেমেছেন কৃষক।

কৃষি জমিতে সার ছিটাচ্ছেন কৃষক, ছবি: আরিফ জাহানপ্রায় পাঁচ বছর টানা উৎপাদিত ধানের ন্যায্য দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত ছিলেন তারা। গেলো বছরের শুরু থেকে প্রায় মাঝ বরাবর ছিল সেই প্রভাব। কিন্তু তারপর থেকে কৃষকের কপাল খুলতে শুরু করে। গতবছর সরকার চাল কেনার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই ধানের বাজার উঠতে থাকে। এ কারণে পর পর রোপা আউশ ও রোপা আমন মৌসুমে উৎপাদিত ধানের ভালো দাম পান কৃষক। তাই নতুন স্বপ্নে কৃষকের মনযোগ এখন চলতি মৌসুমের বোরো চাষে।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুম ২০১৬ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে। এবারের মৌসুমে জেলার ১২টি উপজেলার বোরোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার হেক্টর জমি। বোরো বীজতলা করা হয়েছে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে।
 
বুধবার (০৪ জানুয়ারি) পর্যন্ত ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান লাগানো হয়েছে। মার্চের ১৫ তারিখ পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
 
২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে এ জেলায় বোরো চাষ করা হয়েছিলো ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ব্রি ২৮, ২৯, ৫৮ জাতের ধান ছিলো অন্যতম। চাল হিসেবে ফলন হয়েছিলো প্রায় ৭ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন। তখন কৃষককে প্রতিমণ মোটা জাতের ধান ৫০০-৫৫০ টাকা ও চিকন ৬০০-৬৫০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে।  

রোপা আউশ মৌসুমে ব্রি ধান ২৬, ২৭, ৪৮ ও জিরাশাইল জাতের ধান ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে লাগানো হয়েছিলো। চাল হিসেবে প্রায় ৫৪ হাজার ৮১২ মেট্রিক টন ফলন হয়েছিলো। কৃষক গড়ে প্রতিমণ ধান ৬০০-৬৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন।  

রোপা আমন মৌসুমে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ব্রি ধান ৪৯, ৫১, ৫২, ৩৪, ৬২, ৭২, স্বর্ণা, গুটিস্বর্ণা, মিনিকেট, পাজাম জাতের ধান লাগানো হয়েছিলো। চাল হয় প্রায় ৫ লাখ ৯০ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন।  

পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষে ব্যস্ত কৃষক, ছবি: আরিফ জাহানএরমধ্যে মোটা জাতের প্রতিমণ ধান ৭৫০-৮০০ টাকা, মাঝারি চিকন ধান ৯০০-৯৫০ টাকা ও চিকন ধান প্রতিমণ ১৩০০-১৪০০ টাকা পর্যন্ত দরে কৃষক বিক্রি করেছেন। বর্তমানেও জাতভেদে প্রতি মণ ধান ৮৫০-৯৫০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।

আবুল হোসেন, বুলু মিয়া, নুরুল ইসলামসহ স্থানীয় কৃষকরা বাংলানিউজকে জানান, সরকার ইচ্ছে করলেই কৃষকদের বাঁচাতে পারে আবার মারতেও মারে। গেলো বছরের মাঝামাঝি থেকে শেষ দিনটা তাদের জন্য ছিল অনেক ভালো। চলতি বছর কেমন যাবে তা সামনেই বোঝা যাবে।

ভালো কিছু পাওয়ার আশা নিয়েই বোরোর মাঠে নেমেছেন বলেও জানান তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমের বোরো ধান লাগাতে জেলার কৃষকেরা পুরো প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। গত বছর তারা ফসলের দামও বেশ ভালো পেয়েছেন।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৭
এমবিএইচ/আরআর/টিআই
 


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।