হ্যাঁ, অনেকটা এভাবেই শীত জেঁকে বসতে শুরু করেছে রাজশাহীসহ গোটা উত্তরাঞ্চলে। রোদের সেই তেজ আর নেই।
কেবল শহরেই নয়, গাছগাছালি শোভিত গ্রামবাংলায়ও শীত পড়ছে। আশপাশের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও জয়পুরহাটের মানুষও পুরোদমে শীতের আমেজ উপভোগ করছেন। টমেটো, শিম, মুলা ও নতুন আলুসহ শীতের বিভিন্ন সবজিতে ভরে উঠেছে বাজার।
আর মৌ-মৌ গন্ধে ভরে উঠেছে কৃষকের পাকা আমন ধানের ক্ষেত। এরই মধ্যে কাটা ও মাড়াই শেষে এই ধান ঘরে উঠতে শুরু করেছে। চারিদিকে তাই শুরু হয়ে গেছে নবান্ন উৎসব। শহরে বিক্রি হতে শুরু করেছে শীতের পিঠা। সন্ধ্যার পর ভাঁপা পিঠার গরম ভাঁপে মোড়ে মোড়ে চলছে শীত উদযাপন।
আবহাওয়া অধিদফতর বলছে অনেক বছর পর উত্তরাঞ্চলে এবার স্বাভাবিক নিয়মেই শীত নামতে শুরু করেছে। আগেই পূর্বাভাস ছিল যে, নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই এবার শীত পড়তে শুরু করবে। রাতের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। এর সঙ্গে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এবং নদী অববাহিকায় ভোরে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
আর ডিসেম্বর মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে এ সময় প্রতিদিন গড়ে সাত থেকে আট ঘণ্টা সূর্যের কিরণকাল থাকতে পারে। তবে ডিসেম্বরের শেষ দিকে দুই-একটি মৃদু অথবা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে উত্তরাঞ্চলে কামড় বসতে পারে শীত। শৈত্যপ্রবাহে তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসতে পারে। এছাড়া মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেলে আরও ২ ডিগ্রি কমে তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলিসয়াসে নেমে আসতে পারে। একই সঙ্গে ঘন কুয়াশাও পড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
শীত বাড়তে শুরু করায় রাজশাহীতে শীতের কাপড়ের দোকানে ভিড়
জানতে চাইলে রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গত ২১ নভেম্বর থেকে রাজশাহীতে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। ওই দিন রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ছিল ১৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরদিন ২২ নভেম্বর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৩ নভেম্বর সর্বোচ্চ ছিল ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৪ নভেম্বর সর্বোচ্চ ছিল ২৮ দশমিক ৫ এবং সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৫ নভেম্বর সর্বোচ্চ ছিল ২৮ দশমিক ৪ ও সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৬ নভেম্বর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণত নভেম্বর মাসে দেশে হাড় কাঁপানো শীত খুব একটা পড়ে না। এর কারণ হচ্ছে সূর্য যতো দক্ষিণ গোলার্ধের দিকে যাবে শীতের তীব্রতা ততটাই বাড়তে থাকবে। তাছাড়া দিনের ব্যাপ্তি কমে আসায় ডিসেম্বর থেকেই বাংলাদেশে শীত পড়তে শুরু হয়। তখন উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে বাতাস বাংলাদেশের দিকে আসায় তাপমাত্রা আরও কমে আসে। এর সঙ্গে সাইবেরিয়া থেকে আসা হিমেল বাতাস যোগ হয়। ফলে হাড় কাঁপানো শীত পড়তে শুরু করে। তাই ডিসেম্বরে শীতের এই তীব্রতা আরও বাড়বে।
তবে আশার কথা হচ্ছে বেশ কয়েক বছর পর এবার স্বাভাবিক নিয়মেই শীত পড়তে শুরু করেছে। স্বাভাবিক গতিতেই তাপমাত্রার পারদ নীচের দিকে নামছে। রাজশাহীতে দিনের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে এসেছে। ধীরে ধীরে কমছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও।
আশরাফুল আলম বলেন, সোমবার (২৭ নভেম্বর) রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে শীত যে, নেমে গেছে তা বলাই যায়।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
এসএস/আরআই