ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সাব্বিরের মেডিকেলে পড়ার স্বপ্নপূরণের সারথী আদ্-দ্বীন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
সাব্বিরের মেডিকেলে পড়ার স্বপ্নপূরণের সারথী আদ্-দ্বীন বাবার সঙ্গে সাব্বির-ছবি- মানজারুল ইসলাম

খুলনা: পরিবারে অনেক অভাব থাকা সত্ত্বেও কখনও পড়ালেখার উপর প্রভাব পড়তে দেইনি। হাফেজি শেষ করে দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করি। স্বপ্ন ছিলো পড়াশোনা করে ডাক্তার হবো। দারিদ্র্য সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। অফিস পিয়ন বাবার পক্ষে ডাক্তারি পড়াশোনার এতো অর্থের খরচ চালানো কোনোভাবে সম্ভব নয়।

খুলনার আদ্-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজের ছাত্র মো. সাব্বির হুসাইন আবেগাপ্লুত হয়ে বাংলানিউজকে এ কথা বলেন।

সাব্বির জানান, চলতি বছরে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হওয়ার চান্স পান তিনি।

কিন্তু অর্থাভাবে ভর্তি হতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে জানতে পারেন দরিদ্র ও মেধাবী কোঠায় ভর্তির সুযোগ আছে আদ্-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজে। কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা আমার পারিবারিক অবস্থা জেনে ও ফলাফল দেখে বিনা খরচে পড়ার সুযোগ করে দেয়।

তিনি বলেন, আদ্-দ্বীন আমাকে মেধাবী ও দরিদ্র কোঠায় পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। আমি ও আমার পরিবার তাদের কাছে আজীবন ঋণী।  

সাব্বির জানান, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে দাখিলে গোল্ডেন এ প্লাস ও আলিমে ৪.৮৮ পয়েন্ট পেয়ে উর্ত্তীণ হন। এমবিবিএসের ফলাফলে ২৬৩.২৫ স্কোরে ৭০১৪ পজিশন অর্জন করেন। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কুমিরা গ্রামে। বাবা মো. মহিউল ইসলাম সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজের এমএলএস। তিন ভাই-বোনের মধ্যে বড় বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ছোট বোন ১০ শ্রেণির ছাত্রী।

আদ্-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ড. পরিতোষ কুমার রায়তিনি বলেন, সরকারি মেডিকেলে চান্স না পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। ভীষণ চিন্তায় ছিলাম কি হবে। অবশেষে আদ্-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পেরে স্বপ্নপূরণ হলো।
 
সাব্বিবের বাবা মহিউল ইসলাম বলেন, অনেক অভাব থাকা সত্ত্বেও তিন ছেলে-মেয়ে সবকিছু ভুলে গিয়ে পরীক্ষায় ভালো ফল এনেছে। বড় মেয়েকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছি। ছেলেটা মেডিকেলে চান্স পেয়েও ভর্তি করতে পারছিলাম না। সামান্য অফিস পিয়ন হয়ে আমার পক্ষে বেসরকারি মেডিকেলে পড়ানো কোনোভাবে সম্ভব নয়। আদ্-দ্বীন কলেজের স্যারদের সহযোগিতা না পেলে আমার ছেলেকে এখানে ভর্তিও করতে পারতাম না। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নও পূরণ হতো না। এজন্য তাদের প্রতি আমার পরিবার চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।

তিনি জানান, তার সম্পদ বলতে শুধু বসতভিটাটুকু। এছাড়া আর কোনো জায়গাজমি নেই। অর্থকষ্টের মধ্যেও অদম্য আগ্রহে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করছে। তাদের এ সাফল্যে আমি অনেক খুশি।

আদ্-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ড. পরিতোষ কুমার রায় বাংলানিউজকে বলেন, দক্ষ চিকিৎসক তৈরির দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলছে কলেজটি। অনেকেরই সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার স্বপ্নপূরণ হয় না। আবার বেসরকারিতে চান্স পেয়েও অর্থের অভাবে অনেকেই ডাক্তার হতে পারেন না। সেসব দরিদ্র ও মেধাবীদের বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। এ বছর সাব্বিরের মতো তিনজন দরিদ্র ও মেধাবী কোঠায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
এমআর/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।