ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সাভারে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত ১

সাভার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৯
সাভারে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত ১

সাভার(ঢাকা): সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, লাঠিচার্জ, গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে সুমন মিয়া নামে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার সহকর্মীরা।

মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় সাভার হেমায়েতপুরের বাগবাড়ি এলাকা, উলাইল ও আশুলিয়ার কাঠগড়া, খেজুর বাগান ও জিরাবো এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।  

নিহত সুমন মিয়া (২২) শেরপুর জেলার শ্রীবরদি থানার কলাকান্দা গ্রামের আমির আলীর ছেলে।

তিনি সাভারের উলাইল কর্ণপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে উলাইল এলাকার আনলিমা অ্যাপারেলস পোশাক কারখানার ৬ষ্ঠ তলায় ফিনিশিং সেকশনে কাজ করতেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেতন বৈষম্যের অভিযোগ তুলে হেমায়েতপুরের বাগবাড়ি এলাকায় স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের শামস স্টাইল ওয়্যারস লিমিটেডের শ্রমিকরা সকালে কারখানায় কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার পাশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে স্ট্যান্ডান্ড গ্রুপ, ডার্গ গ্রুপ ও জেকে ফ্যাশন কারখানার শ্রমিকরাও তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন।  

পরে তারা হেমায়েতপুর-শ্যামপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধের চেষ্টা করতে থাকেন। এসময় পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পরে শ্রমিকরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।  

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ এসময় লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশ ও শ্রমিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। পরে আহতদের নিকটস্থ বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

নিহত সুমনের সহকর্মী রিপন জানান, দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উলাইল এলাকায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা একই দাবিতে সড়কে নেমে এলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটে। এসময় সুমন মিয়া নামে আনলিমা অ্যাপারেলস কারখানার কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক শহিদুল ইসলাম মৃত ঘোষণা করেন।

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমজাদুল হক জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কয়েকজনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এদের মধ্যে সুমন মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে তারা মৃত অবস্থায় পান।  

এদিকে আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার সাউদার্ন বিডি লিমিটেড, কন্টিনেন্টাল গার্মেন্টস লিমিটেড, হ্যাসন কোরিয়া সোয়েটার লিমিটেড, এসবিএস ডেনিম ওয়্যার লিমিটেড, লিলি এ্যাপারেলস লিমিটেড ওয়্যার লিমিটেড, ম্যাট্রো নিটিং লিমিটেড ও এশিয়ান নিটওয়্যার লিমিটেড নামে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা তাদের বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে।  

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও জলকামান ব্যবহার করে। এসময় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াসহ ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।  

আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার সাউদার্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা জানান, বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে তারাসহ আরো বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভে জিরাবো-বিশমাইল সড়কে নামলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল ও জলকামান থেকে পানি নিক্ষেপ করে বিক্ষোভ থামানোর চেষ্টা করে। এসময় শ্রমিকরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে অন্তত ২০ শ্রমিক আহত হয়।  

শিল্প পুলিশ-১ এর ওসি মাহমুদর রহমান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাভার ও আশুলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত শিল্প পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে সংঘর্ষে শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি বলে জানান তিনি।  

শ্রমিক নিহতের ব্যাপারে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সানা শামিনুর রহমান শামীম বাংলনিউজকে বলেন, স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও আনলিমা কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে এধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কে বা কারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন সে ব্যাপারে তার জানা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।