ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সন্তানের মুখ দেখা হলো না অন্তরের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
সন্তানের মুখ দেখা হলো না অন্তরের

মাগুরা: পৃথিবীতে আসার আগেই বাবাকে হারালো অনাগত শিশুটি। ক’দিন বাদেই পৃথিবীর আলো দেখবে অন্তর ইসলাম ও আম্বিয়া খাতুন দম্পতির প্রথম সন্তান। এরই মধ্যে খুন হলেন অন্তর ইসলাম। তাই খুশির বদলে পরিবারে এখন কান্নার রোল। স্বামী হারিয়ে নির্বাক অন্তঃসত্ত্বা আম্বিয়া খাতুন।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (১৯ ডিসেম্বর) মাগুরার শালিখা উপজেলার হরিশপুর গ্রামে চিত্রা নদীর পাড় থেকে উদ্ধার করা হয় অন্তর ইসলামের (২৬) মরদেহ। তিনি একই উপজেলার বুনাগাতি ইউনিয়নের দেশমুখপাড়া গ্রামের তাইজেল শেখের ছেলে।

নিহত যুবক ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকচালক।

একমাত্র সন্তান অন্তর ইসলাম নিহত হওয়ার পর থেকে আহাজারি থামছে না বাবা তাইজেল শেখের। তিনি বলেন, একটা মাত্র ছেলে আমার। ওকে ছাড়া কিভাবে বাঁচবো? কদিন বাদে ওর সন্তান হবে। তাকে বাবার মুখটাও দেখতে দিল না খুনিরা।  

এ ঘটনায় শনিবার নিহতের বাবা বাদী হয়ে শালিখা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামি করা হয়েছে কয়েকজন অজ্ঞাতসহ শালিখা উপজেলার শরুশুনা গ্রামের হালিম শেখের ছেলে সুজন শেখ (৩০) ও দেশমুখ পাড়ার মুজিবর মোল্লার ছেলে হাসিবুল মোল্লাকে (৪০)।  তারা দুজনই পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় এক যাত্রীকে নিয়ে বুনাগাতি থেকে যশোর গিয়েছিল অন্তর। সেখান থেকে ফিরে আসার পর দুপুরে কোনো এক সময় হরিশপুর গ্রামের ওই এলাকায় ডেকে নিয়ে তাকে খুন করা হয়।  ঘটনাস্থলের কিছুদূরে নিহতের ইজিবাইকটি পড়ে ছিল। এছাড়া নিহতের পকেটে বেশকিছু নগদ টাকা ও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও পাওয়া যায়। উদ্ধার হয় হত্যায় ব্যবহৃত দা ও সন্দেহভাজন খুনিদের রক্তমাখা জামা ও স্যান্ডেল।

মামলাটি তদন্ত করছেন শালিখা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গৌতম ঠাকুর। তিনি বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, মরদেহটি যেখান থেকে উদ্ধার করা হয় তার পাশেই সন্দেহভাজন আসামি সুজন শেখের মামা রবিউল ইসলামের বাড়ি। ঘটনার দিন মামা বাড়িতে একজনকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন সুজন শেখ। দুপুরে ওই বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করেন তারা। পরে ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে দুজনে অন্তরকে ডেকে নিয়ে খুন করেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তদন্ত কর্মকর্তা জানান, হত্যায় ব্যবহৃত দাটি মামা রবিউল ইসলামের বাড়ি থেকে নেওয়া হয়। এছাড়া ঘটনাস্থলে পাওয়া স্যান্ডেল ও রক্তমাখা কাপড় সুজন শেখের বলে জানা গেছে।  

পরিদর্শক গৌতম ঠাকুর বলেন, রক্তমাখা জামা ও স্যান্ডেল যে সুজন শেখের তা শনাক্ত করেছেন তার মামী রবিউল ইসলামের স্ত্রী জেসমিন আক্তার। যিনি ওইদিন সুজন শেখ ও তার সঙ্গীকে দুপুরে খাবার দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে রোববার মাগুরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন জেসমিন আক্তার। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের আগে একাধিকবার অন্তর ও সুজনের মধ্যে মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এ বিষয়ে শালিখা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবির সিদ্দিকী শুভ্র বাংলানিউজকে বলেন, হত্যার সঙ্গে সুজন শেখের জড়িত থাকার বিষয়ে অনেকটায় নিশ্চিত পুলিশ। তবে তার সঙ্গে আরেকজন কে ছিল সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আর কি কারণে এ হত্যাকাণ্ড সে বিষয়টিও এখনো পরিষ্কার নয় পুলিশ।  আসামি ধরা পড়লে বাকিটা পরিষ্কার হওয়া যাবে বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।