ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

অভাবের তাড়নায় শীতেও থেমে নেই দুস্থ নারীদের জীবন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২০
অভাবের তাড়নায় শীতেও থেমে নেই দুস্থ নারীদের জীবন

বগুড়া: অভাবের তাড়নায় হাড় কাঁপানো শীতেও থেমে নেই বগুড়ার অভাবী দুস্থ নারীদের সংগ্রামী জীবন। অভাবের সংসারে সামান্য আয়ও যেন তাদের কাছে সোনার হরিনের মতো দামি।

সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বগুড়ার কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে ক’জন সংগ্রামী নারীর জীবনের কর্মযজ্ঞ। জীবিকার তাগিদে হাড় কাঁপানো শীতেও বসে নেই তারা।

সালেহা বেগমের স্বামী ও এক ছেলে-মেয়ে নিয়ে তার সংসার। অভাবের কমতি নেই তার সংসারে। ছেলে-মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন তিনি। অভাবের ঘানি টানতে গিয়ে স্বামী রেজাউলের সঙ্গে বনিবনা চলছিল না সালেহার। তাই শেষে নিজের জীবনের মোড় ঘুরিয়েছেন তিনি। সংসারের অভাব তাড়ানোর জন্য নিজেও দিনমজুরের কাজ করেন।

অভাব থাকবেই, তাই বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি সালেহা বেগম। নাম লেখান নারী শ্রমিকের খাতায়। বর্তমানে তারা ২০-২৫ জন নারী শ্রমিক ক্ষেতের মরিচ ও বেগুন তোলার কাজ করছেন কয়েক মাস ধরে।

সালেহার মতো অসংখ্য নারী শ্রমিকের হাত ধরেই ঘুরছে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা। কিন্তু সে অনুযায়ী তাদের ভাগ্যের তেমন একটা উন্নতি ঘটছে না। কারণ পুরুষের সমান কাজ করেও দিনশেষে মিলছে অর্ধেক পারিশ্রমিক।

একই ভাবে বগুড়ার ১২টি উপজেলার কৃষকরা নারী শ্রমিকদের একইহারে পারিশ্রমিক দিয়ে থাকেন।
নারীদের অর্ধেক পারিশ্রমিক দেওয়ার বিষয়ে কৃষক ইয়াকুব আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘একজন পুরুষ শ্রমিক মরিচ ক্ষেতের গাছ বাধা, সেচ দেওয়া, ওষুধ স্প্রে করা, মরিচ উঠানোসহ সব ধরনের কাজ করতে পারেন। কিন্তু একজন নারী শ্রমিকের পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব না। এসব বিবেচনায় বর্তমানে একজন নারী শ্রমিককে দিনশেষে ১৫০-২৫০ টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। আর পুরুষ শ্রমিককে দেওয়া হয় ৫০০ টাকা। ’

কৃষক সাজ্জাদুল আলম, আবু হোসেন বাংলানিউজকে জানান, অনেক ক্ষেত্রে পুরুষ শ্রমিকরা কাজে কিছুটা ফাঁকি দেন। কিন্তু ফাঁকির কাজটি নারী শ্রমিকরা করেন না। এছাড়া ক্ষেতের মরিচ ও বেগুন তোলার কাজ নারী শ্রমিকদের মতো নিখুঁতভাবে পুরুষ শ্রমিকরা করতে পারেন না। এ কারণে সবজি জাতীয় বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকরা সর্বত্রই আগের চেয়ে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন।

নারী শ্রমিকদের পারিশ্রমিক সম্পর্কে তারা জানান, পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থা হওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে। তবে একটি সময় নারী শ্রমিকদের কাজে নিতে হলে পুরুষ শ্রমিকদের মতোই পারিশ্রমিক দিতে হবে।  
হয়তো সে সময়টি আসতে আর বেশি দিন বাকি নেই বলে মন্তব্য করেন তারা।

সালেহা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘পেটে ক্ষুধা নিয়ে লজ্জার কিছুই নেই। আমি তো চুরি করছি না। কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিচ্ছি। মহাজনরা কাজে না নিলে তো এই টাকাও ঘরে আসতো না। এতে অভাব আরও বাড়তো। ’

একদিকে স্বামী ও অন্যদিকে তার কাজের মাধ্যমে উভয়ের মিলিত আয়ে সংসার ভালোই চলছে বলে জানান এ নারী শ্রমিক।

আনোয়ারা, শহীদা, কহিনুরসহ অন্য নারী শ্রমিকরা বাংলানিউজকে জানান, তাদের প্রত্যেকের সংসারে কমবেশি অভাব আছে। অভাবের তাড়নায় তারা দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে আশেপাশের এলাকায় বিভিন্ন মহাজনের কাছে কাজ করে জীবিকা উপার্জন করছেন। পারিশ্রমিক কম হলেও আপতত এতেই সন্তুষ্ট তারা।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২০
কেইউএ/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।