ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সফলতা-ব্যর্থতায় প্রথম বছর পার সরকারের

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২০
সফলতা-ব্যর্থতায় প্রথম বছর পার সরকারের

ঢাকা: আলোচনা-সমালোচনা, সফলতা-ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয়বারের সরকারের প্রথম বছর পার হলো। 

এই এক বছরে সরকারের বড় সফলতা দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু আর গুজব মোকাবিলা। তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে, বিশেষ করে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয়েছে সরকারকে।

২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি চলতি মেয়াদের সরকার গঠিত হয়েছিল। এ হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ চালানোয় টানা ১১ বছর পার করছে আওয়ামী লীগ সরকার।

এ মেয়াদের শুরু থেকে এক বছরের শেষ পর্যন্ত বিরোধী দলের রাজনৈতিক কোনো চাপ সরকারকে স্পর্শ করতে পারেনি। এটা একদিকে বিরোধীদের ব্যর্থতা, অন্যদিকে সরকারের বড় সফলতা। এই এক বছর রাজনৈতিক চাপমুক্ত হয়ে দেশ পরিচালনায় আওয়ামী লীগ পুরো সফল।

তবে সারাবছরই সামাজিক ক্ষেত্র থেকে সৃষ্ট বিভিন্ন সংকট মোকাবিলা করতে হিমশিম খেতে হয়েছে সরকারকে। মোকাবিলা করতে হয়েছে কৃত্রিম সংকট গুজবও।

গত জুলাইয়ে পদ্মাসেতুতে শিশুর কাটা মাথা দেওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়লে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হয়। শিশু ধরার এই গুজব থেকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির বলি হন বেশ কয়েকজন। একপর্যায়ে সরকারের কঠোর পদক্ষেপে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এটা এই সরকারের সমাজিক অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে বড় সফলতা।

এছাড়া বছরজুড়েই সামাজিক ক্ষেত্রে আরও সংকট মোকাবিলা করতে হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারকে। এর মধ্যে সন্ত্রাস, বর্বোরচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা রয়েছে, যা নিয়ে সরকারকে সমালোচনার মুখোমুখি হওয়ার পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলায় হিমশিম খেতে হয়েছে।

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা, বগুনার কলেজছাত্র রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্বিবিদ্যালয় (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা- সরকারের প্রথম বছরে সমালোচনার শীর্ষে ছিল।

আলোচিত এসব হত্যাকাণ্ডের কোনোটির সঙ্গে সরকারি দলের লোক জড়িত থাকায় বিভিন্ন দিক থেকে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা হয়েছে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে সরকার।

এ বছর সরকারের জন্য সবচেয়ে আলোচিত ও সাহসী পদক্ষেপ ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান। গত ১৮ সেপ্টেম্বর চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার অভিযান শুরু হয়। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে বেরিয়ে আসে রাজধানীর ক্লাবগুলোতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু নেতার ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা ক্যাসিনোসহ দুর্নীতি, অনিয়ম ও এর সঙ্গে জড়িতদের নানা তথ্য।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েক দফা অভিযানে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন যুবলীগের কয়েক নেতা গ্রেফতার হন। এর মধ্যে বহুল আলোচিত ছিল গত ৬ অক্টোবর যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট গ্রেফতারের ঘটনা।

এর আগে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য বেরিয়ে আসলে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি আলোচিত ঘটনা।  এরপর যুব লীগের চেয়ারম্যান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।

তবে সরকারের এই অভিযান এখন আর দৃশ্যমান নেই। এই বছরেই সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির তথ্য উঠে আসে এবং কোনোটি ছিলো ব্যাপক আলোচিত। দুনীতির বিরুদ্ধে অভিযানের শুরুতে সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযানই ছিলো দৃশ্যমান।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বাংলানিউজকে বলেন,‘দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে সরকার চেষ্টা করেছে, কোনো ত্রুটি ছিলো না। যেখানেই সমস্যা হয়েছে সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শুদ্ধি অভিযান থেমে যায়নি। আমরা অনুসন্ধান করছি। অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হয়ে ধরবো। ’

এ বছর সরকারকে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয় পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায়। পেঁয়াজের দাম ইতিহাস সৃষ্টি করে অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে যাওয়ার কারণ সিন্ডিকেট- সরকার এটা বুঝতে পারলেও ভাঙতে পারেনি।

একই সময় আরেক সংকট তৈরি হয় লবণের গুজব ছড়িয়ে পড়লে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকার ক্ষিপ্রতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সফল হয়েছে।

এ সরকারের প্রথম বছরের শেষ দিকে জাতীয়ভাবে আরেকটি আলোচিত ঘটনা ছিল রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ঢুকে পড়া। মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী রাজাকারের তালিকা প্রকাশ ছিল সরকারের প্রত্যাশিত বিষয়। কিন্তু সেই তালিকায় বেশকিছু মুক্তিযোদ্ধার নাম চলে আসায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাদের, যা শেষপর্যন্ত গড়ায় তালিকা স্থগিত পর্যন্ত।

সরকারের এক বছরের কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বাংলানিউজকে বলেন, কাজ করেতে গেলে ভুল-ত্রুটি হতে পারে। আমাদের সরকার সাধ্যমতো সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে এক বছর কাজ করেছে।  

তিনি বলেন, মানুষের চাহিদা অনেক। সব পূরণ করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে পেঁয়াজের দাম মানুষকে কষ্ট দিয়েছে। মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছে। আমাদের ছোটখাটো ব্যর্থতা আছে। তবে সার্বিকভাবে বিচার করলে এই সরকার অত্যন্ত সফল।

এ বছর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম আসা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, তালিকায় ভুল ধরা পড়েছে বলেই, সেটা স্থগিত করে নিয়েছি। এরপর বিষয়টি শেষ হয়ে গেছে।

সরকারের এক বছর কেমন কেটেছে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসিম কুমার উকিল বাংলানিউজকে বলেন, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দেশ এগিয়ে চলছে, গত এক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে গেছে। আমি বলবো উন্নয়ন অগ্রগতির ধারা এগিয়ে নিতে গত এক বছরেও সরকার সফল হয়েছে। গত বছরের শুরুতে সরকারের মন্ত্রিসভা গঠন হয়, শেষে আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। রাজনীতির দিক থেকে এটাও সফলতা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২০
এসকে/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।