ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ পৌষ ১৪৩১, ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

অর্জন যারই হোক, আমার চাওয়া নগরের উন্নয়ন: সিসিক মেয়র

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২০
অর্জন যারই হোক, আমার চাওয়া নগরের উন্নয়ন: সিসিক মেয়র

সিলেট: ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেটে গড়ে তোলা হচ্ছে (ইলেক্ট্রনিক সিটি) হাইটেক পার্ক। এখানকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার বরাদ্দ দিয়েছে ২ হাজার ৫২ কোটি টাকা। ফলশ্রুতিতে এ নগরের বিদ্যুৎ লাইন চলে যাচ্ছে মাটির নিচে।  

এরইমধ্যে নগরের হযরত শাহজালাল দরগাহ এলাকার ৩শ’ মিটার বিদ্যুৎ লাইন মাটির নিচে নিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়েছে। কিন্তু, ব্যাপক এ অর্জনের কৃতিত্ব সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক), বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) নাকি এককভাবে সরকারের, তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় রীতিমতো তর্কযুদ্ধ চলছে।


 
কেউ কেউ উন্নয়নের পুরো কৃতিত্বই দিচ্ছেন সরকারকে। কারও বক্তব্য, আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র না হলে এ কাজ হতো না। অনেকে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে কৃতজ্ঞতার সিংহভাগ দিতে ইচ্ছুক।  

এদিকে এ বিতর্ক শেষ হতে না হতেই গত মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) বিদ্যুৎ বিভাগের এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি নতুন করে বিতর্কের আগুন উস্কে দিয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ প্রকল্প সিসিকের নয়, পিডিবি’র।
 
সম্প্রতি বাংলানিউজের মুখোমুখি হয়ে এ বিতর্কসহ প্রকল্পের ব্যাপারে আরও বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত কথাবার্তা বলেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ প্রকল্প ঘিরে চলমান বিতর্কের ব্যাপারে সিসিক মেয়র বলেন, আমিতো বলিনি এটা সিসিকের কাজ। এটা সরকারের উন্নয়ন, বিদ্যুৎ বিভাগকে দিয়ে করানো হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কাজ কি আমরা করতে পারবো? তবে এ কাজ করতে সড়ক খুঁড়তে হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগ কাজের আগে শর্ত দিয়েছিল ট্রান্সফর্মার সরানোর। প্রজেক্টের ডিপিপিতে মাটির নিচ দিয়ে তার নেওয়ার জন্য রাস্তা খোঁড়ার টাকা বরাদ্দ ছিল না। রাস্তা খুঁড়লে সিসিককে ক্ষতিপূরণ দিতে হতো। সেক্ষেত্রে প্রকল্প বাতিলের সম্ভাবনা ছিল। অর্থাৎ এ প্রকল্প না করার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন, তারা সবটুকু করেছে। আমি ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা কাটতে বলেছি, নয়তো কাজ হতো না। ঠিকাদারের সঙ্গে থেকে কাজ করিয়েছে।

‘তারা কাজ করেছে। সিসিক তদারকি করেছে। তারা সড়কবাতির কানেকশন রাখেনি। ভাগ্য ভালো দরগাহের ৩শ’ মিটারের মধ্যে এটি করা হয়েছে। পুরো শহর সড়ক বাতিহীন হয়ে গেলে তো জনগণ আমাকেই প্রশ্ন করতো। এটা নিয়ে সিসিকের প্রকৌশলীদের পরিকল্পনা করতে বলেছি, লাইনের পুল রাস্তার মধ্যখানে, আইল্যান্ডে নাকি সাইটে বসবে। ’
 
এ যাবত আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎপ্রকল্পের কাজ কতোটুকু হয়েছে জানতে চাইলে আরিফুল হক বলেন, আম্বরখানা থেকে সার্কিট হাউস পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ লাইন বসে গেছে। এখন পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ রয়েছে। আগামী মাসে সার্কিট হাউজ পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল লাইনের কাজ পুরোপুরি শেষ করার পর চৌহাট্টা থেকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত নেওয়া হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে পুরো শহরকে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল লাইনের আওতায় আনতে চাই। এ যাবত হযরত শাহজালাল (র.) দরগাহ এলাকায় প্রায় ৩শ’ মিটার কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে।
 
আরিফুল হক বলেন, মেয়র হিসেবে প্রথম মেয়াদে নগরীর ২৫ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন মাটির নিচে নেওয়ার প্রস্তাব দেই। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের একান্ত চেষ্টায় প্রকল্পটির কন্ট্রাক্ট সাইন হয়। প্রকল্পটি প্রাথমিকভাবে পাস হওয়ার পর আমি সরকারের হেফাজতে (কারাগারে) ছিলাম। সে কারণে এটি বাতিল হয়ে যায়। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর সাবেক অর্থমন্ত্রীকে ধরে এটির অনুমোদন করাই। এরপর বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীর বিশেষ সহযোগীতায় এই কাজ এসেছে। এই কৃতিত্বের জন্য সরকার প্রধানসহ তাদের ধন্যবাদ জানাই।  

‘অর্জন যারই হোক, আমার চাওয়া নগরের উন্নয়ন। যারাই নগরের উন্নয়নে কাজ করবেন, ভূমিকা রাখবেন, তাদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এই কাজে জড়িতদের জন্য নগরবাসীর পক্ষ থেকে দোয়া থাকবে। মেয়র হিসেবে প্রত্যাশা প্রাথমিকভাবে সফল হলে ৭ কিলোমিটার নয়, পুরো ২৫ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। পুরো নগরীতেই হবে পাতাল বিদ্যুৎ লাইন। ’

তবে সিলেট ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা, ফলে সে ব্যাপারে সতর্কতার কথা মাথায় রেখে এ ধরনের কাজ করতে হবে জানিয়ে আরিফুল হক বলেন,  বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্প হলে বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইন, দুইটাকে কীভাবে টেকনিক্যালি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এটা এখনই ভাবতে বলেছি। পরে ‘চোর গেলে বুদ্ধি বাড়ে’, এমন যাতে না হয়। আগামী সপ্তাহে এ ব্যাপারে টেকনিক্যাল টিম নিয়ে বসা হবে। বিদ্যুৎ আন্ডারগ্রাউন্ড হয়েছে, আমাদের দায়িত্বও অনেক বেড়ে গেছে। যারা গ্যাস, ওয়াসা, ডিসসহ ইউটিলিটি সার্ভিস দেয় তাদের নিয়ে বসতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে। তা না হলে তারা হঠাৎ এ ধরনের প্রকল্প অনুসারে কাজ করতে গিয়ে বিপদে পড়বে। এজন্য সড়কে রেডলাইন ‘লাল চিহ্ন’ বা এয়ারমার্ক করে দেওয়া হবে। কেবল মাটির নিচে লাইন ফেলে রাখলে হবে না।  

মাটির নিচে বিদ্যুৎ লাইনে কোথাও যদি দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে কীভাবে উত্তরণ সম্ভব, এ বিষয়ে পিডিবি এখনও কিছুই জানায়নি। এসব টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে সিসিকের প্রকৌশলীদের বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করার আহ্বান জানান মেয়র।  
 
মেয়র বলেন, সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ না করলে নগরকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। বিদ্যুৎ বিভাগ, ট্রাফিক বিভাগ, যারা নগরের উন্নয়নে বিনা দ্বিধায় জায়গা ছেড়েছেন, সবার সহযোগিতায় কাজ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০২০
এনইউ/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।