ঢাকা, মঙ্গলবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না দগ্ধ মনোয়ারা

শাহিদুল ইসলাম সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২০
অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না দগ্ধ মনোয়ারা

জয়পুরহাট: শীত নিবারণে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হওয়া মনোয়ারা বেগম নামে এক নারী অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। 

প্রাথমিক পর্যায়ে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতাল, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল ও টিএমএসএস মেডিক্যাল কলেজ ও রফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতালের চিকিৎসকগণ জানিয়েছেন, তাকে বাঁচাতে হলে বাংলাদেশের যে কোনো বার্ন ইউনিটে খুব শিগগিরই ভর্তি করাতে হবে।  

কিন্তু দরিদ্র রিকশাচালক স্বামী আবুল হোসেন অর্থাভাবে বিভাগীয় কিংবা রাজধানীর মতো জায়গায় বার্ন ইউনিটে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

ফলে শরীরের ৫০ ভাগ অংশ দগ্ধ অবস্থায় ৩ সন্তানের জননী মনোয়ারা বেগম এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।  

জানা গেছে, চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে বাড়ির সবার অনুপস্থিতিতে জয়পুরহাট সদরের দোগাছী ইউনিয়নের রিকশাচালক আবুল হোসেনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম শীত নিবারণের জন্য রান্নার চুলাতে আগুন পোহাচ্ছিলেন। এ সময় চুলার আগুন শরীরে লেগে গেলে তার চিৎকারে আবুল হোসেনের বড় ভাই আব্দুল ওহাব ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।  

সেখানেও তিনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা না পেলে পরিবারের সদস্যরা পরের দিন দুপুরে টিএমএসএস মেডিক্যাল কলেজ এবং পরে রফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে তাকে ১১ দিন চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে যে কোনো বার্ন ইউনিটে ভর্তির পরামর্শ দিয়ে ছাড়পত্র দিলে ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে পরিবারের সদস্যরা তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।  

মনোয়ারা বেগমের মেয়ে রাবেয়া ও ছেলে মনোয়ার কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, সরকারি খাস জায়গায় সোয়া ১ শতক জমির ওপর একটি বেড়ার ঘরে বসবাস করছি আমরা। বাবা রিকশা চালিয়ে কোনমতে সংসার চালায়। এরই মধ্যে শীত নিবারণের জন্য মা আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হলে স্থানীয় কোনো মেম্বর-চেয়ারম্যান আর্থিক সহায়তা তো দূরের কথা কোনো ধরনের খোঁজ-খবরই নেননি। এ অবস্থায় কিভাবে আমার মায়ের চিকিৎসা করাবো।  

প্রতিবেশী মাসুদুল হক ও রহিমা বেগম অনেকটা আক্ষেপ নিয়েই জানান, দেশে কত ধনী মানুষ আছে অথচ অর্থাভাবে একটি মানুষ চিকিৎসা করাতে না পেরে দিনের পর দিন মৃত্যুর প্রহর গুনলেও কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসছেন না।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, পরিবারটিকে পরামর্শ দিয়েছি রাজশাহী কিংবা রংপুর মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করিয়ে দিতে।

জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন চন্দ্র রায় বলেন, আগুনে দগ্ধ হয়ে এক নারী অসহায় অবস্থায় পড়ে থাকার বিষয়টি অবগত হয়েছি। আমি চেষ্টা করবো উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু অনুদান বরাদ্দ দেওয়ার। তবে তার দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা দরকার।  

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২০         
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।