ঢাকা, রবিবার, ২৫ কার্তিক ১৪৩১, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মা হয়েছে পাগলি বাবা হয়নি কেউ!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২২
মা হয়েছে পাগলি বাবা হয়নি কেউ!

ফরিদপুর: ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় নাম পরিচয়হীন এক পাগলি বয়স আনুমানিক (২৮) এক পুত্র সন্তানের মা হলেও বাবা হয়নি কেউ। এমন ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

রোববার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজিলা কবির ত্রপা বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।  

জানা যায়, শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের বালিয়া ডাঙ্গী গ্রামে স্থানীয় নারীদের সহযোগীতায় মানসিক ভারসাম্যহীন (পাগলি) এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। খবর পেয়ে শনিবার (১৫ জানুয়ারি) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিলা কবীর ত্রপা ওই পাগলি ও তার শিশু সন্তানকে দেখতে যান। এ সময় তিনি ওই নবজাতক ও তার মায়ের সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি স্থানীয় দুই ইউপি সদস্য আছিয়া খাতুন ও বাবুল মোল্লার তত্ত্বাবধানে রেখে আসেন।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সংরক্ষিত মহিলা সদস্য আছিয়া খাতুন বাংলানিউজকে জানায়, গত দুই মাস আগে ওই গ্রামের শেষ মাথায় পদ্মা নদীর পাড়ে ওই পাগলিকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তখন তিনি অসুস্থ ও অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। কয়েকদিন নদীর পাড়ে খড়ের গাদার ভিতরে ঘুমিয়ে থাকতেন। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয়দের সহায়তায় অন্তঃসত্ত্বা পাগলিকে ওই গ্রামের বাসিন্দা মৃত মনিরুজ্জামান মাস্টারের ছেলে শহীদ খানের ভাঙাচোরা পরিত্যক্ত একটি ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দেন।

শুক্রবার পাগলি এক সন্তান জন্ম দিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নবজাতক ও তার মায়ের সুস্থতার কথা চিন্তা করে শিশু সন্তানটিকে তাদের তত্ত্বাবধানে রেখে আসেন ও তাদের চিকিত্সার ব্যবস্থা নেন।

এ সময় এসিল্যান্ড মো. জিল্লুর রহমান, ওসি মো. জিয়ারুল ইসলাম ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজাদ খাঁন উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে শহীদ খান বলেন, প্রায় এক মাস ধরে ওই পাগলি তাদের বাড়িতে আছে। তার স্ত্রী সার্বক্ষণিক পাগলির খোঁজ খবর রাখে। পাগলি ও তার সন্তানের সু চিকিৎসা ও নিরাপত্তার কথা ভেবে ইউএনও দফায় দফায় মেডিক্যাল টিম পাঠানোর পাশাপাশি ভাঙ্গা ঘরটি মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছেন।

পাগলি ও তার সন্তানের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিলা কবির ত্রপা বলেন, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’। তিনি তার নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে এই মানুষিক ভারসাম্যহীন অসহায় মহিলার পাশে দাঁড়িয়েছেন।

ইউএনও বলেন, গত দুই সপ্তাহ আগে রাতের বেলায় ওই এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণের সময় স্থানীয়রা ওই পাগলির বিষয়ে আমাকে তথ্য দেয়। আমি তাৎক্ষণিক ওকে দেখতে যাই ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিই। শুক্রবার মেয়েটি ফুটফুটে এক পুত্র সন্তান জন্ম দিয়েছে। নবজাতকসহ তার মায়ের চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিশুটির মাকে হাসপাতালে আনা সম্ভব না হওয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীরা ওই বাড়িতে গিয়ে তার চিকিত্সা দিচ্ছেন। এছাড়া শিশুখাদ্য দুধ ও প্রয়োজনীয় পোশাক সরবরাহ করা হয়েছে। নবজাতকে দত্তক নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সদস্যদের নিয়ে আলোচনা করে শিশুটি দত্তক দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত স্থানীয় এক মা তার সন্তানের মতন ওই পাগলির নবজাতককে মাতৃস্নেহে  নিজের স্তন্য পান করাচ্ছেন। পাগলি সন্তান রেখে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ালেও উভয়েই সুস্থ রয়েছে বলে জানায় স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার মো. বাবুল মোল্লা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।