ব্রাহ্মণবাড়িয়া: তিন রুমের ছোট একটি টিনের ঘর। এর মধ্যে একটি রুমে পরিবার নিয়ে থাকতেন ইসমাইল হোসেন সুজন।
তার স্ত্রী লিমা স্থানীয় একটি চাতাল কলে শ্রমিকের কাজ নেন। এরপর থেকেই ওই চাতাল কলের সরদার সফিউল্লার সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। এরপর থেকে তাদের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে। এরপর চাতাল কলের সরদার আরেকজন নারী শ্রমিকের সহায়তায় তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এরপরই থেকেই বিভিন্ন কৌশল শুরু করেন লিমা।
লিমার স্বামী সুজন বলেন, আমার দুই ছেলেকে হত্যার করার জন্য চাতাল সরদার সফিউল্লাহ্ পাঁচটি মিষ্টি সরবাহ করে এতে বিষ মিশিয়ে রাতে আমার ঘরের জানালা দিয়ে লিমা কাছে দিয়ে যান।
এ দিকে শিশু দুটির মৃত্যুর ঘটনাকে সিরাপ জাতীয় ঘটনা মনে হলেও ঘটনার পরপরই তার স্ত্রীর মোবাইল ফোনটি সন্ধান না পাওয়ায় পরিববারে সদস্যদের মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালে লিমা পুরো ঘটনা খুলে বলে। এ ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃতার কথা স্বীকার করে। পরে পুলিশ এসে তাকে আটক করে নিয়ে যায়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে লিমা সবকিছু স্বীকার করেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) দুপুর থেকেই মুরসালিন ও ইয়াসিনের জ্বর ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিশুদের মা লিমা বেগম তার শাশুড়িকে বাড়ির পাশের দুর্গাপুর বাজারে মাঈন উদ্দিনের ওষুধের দোকান “মা ফার্মেসি” থেকে সিরাপ আনতে বলেন। শিশুদের দাদি সিরাপ এনে লিমার কাছে দেন। এসময় লিমা তার ছেলেদের সিরাপ সেবন করান। এর কিছুক্ষণ পরই দুই শিশুই বমি করতে শুরু করে এবং অস্বস্তি বোধ করতে থাকে। অবস্থার অবনতি হলে তাদের দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে শিশু দু’টিকে জেলা সদর হাসাপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাতেই তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। বাড়িতে নিয়ে আসার পর রাত ৯টায় ইয়াসিন খানের মৃত্যু হয়। আর রাত সাড়ে ১০টায় ছোট ভাই মুরসালিনেরও মৃত্যু হয়। এতোদিন লিমা ছেলেদের মৃত্যুর জন্য সিরাপকে দায়ী করে আসছিলেন। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও সিরাপে ক্ষতিকর কিছু মেলেনি।
আরও পড়ুন:
জ্বরের সিরাপ খেয়ে ২ ভাইয়ের মৃত্যুর অভিযোগ
দুই ভাইয়ের মৃত্যু: জ্বরের সিরাপ পরীক্ষার নির্দেশ
সিরাপ নয়, বিষ খাওয়ায়ে ২ সন্তান হত্যা, মা গ্রেফতার
প্রেমিকের কথায় ‘পথের কাঁটা’ সরাতে ২ ছেলেকে হত্যা করেন লিমা!
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২২
এনটি