ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

এমপি কোটার লাখ টাকা প্রকল্পে নামমাত্র কাজ! 

সাজিদুর রহমান রাসেল , ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২২
এমপি কোটার লাখ টাকা প্রকল্পে নামমাত্র কাজ! 

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের বরুনিয়া এলাকায় গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা-খাদ্যশস্য/নগদ অর্থ) কর্মসূচি অর্থবছর ২০২১-২০২২ সনের প্রথম পর্যায়ে কাজ করে টাকা আত্মসাৎ করেছে এমন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্পের সভাপতির বিরুদ্ধে।

বরুনিয়া দুঃখী রামের বাড়ির মোড় হতে ভাষান মোল্লার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার পুনর্নির্মাণে প্রকল্পের কাজের শুরুর তারিখ চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি এবং কাজ শেষ হয় চলতি মাসের ১৫ মার্চ।

এমপি কোটার কাজের প্রকল্পের পরিমাণ ৯ লাখ ৫০ হাজার আর এই প্রল্পের বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য মোক্তার আলী। সদর উপজেলার প্রকল্প কর্মকর্তার সহায়তায় প্রকল্পের সভাপতি নিজেই ঠিকাদার হয়ে কাজ করে চেক নিয়েছেন এমনটাই দাবি ওই সদস্যের।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বরুনিয়া দুঃখী রামের বাড়ির মোড় থেকে ভাষান মোল্লার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার পুনর্নির্মাণ করার জন্য মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি প্রকল্প দিয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে কাজটি শুরু হয় আর শেষ হয় চলতি মাসের ১৫ তারিখে। নিয়ম অনুযায়ী একটি কমিটি করে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা-খাদ্যশস্য/নগদ অর্থ) কর্মসূচির আওতার কাজটি করার কথা কিন্তু প্রকল্পের সভাপতি নিজেই এককভাবে ভেকু দিয়ে অন্যের জমি থেকে জোর করে মাটি কেটে কাজ করে চেক নিয়েছেন। এমপি কোটার কাজের বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও স্থানীয়রা কেউই জানেন না, সবাই জানেন মোক্তার আলী পুনরায় মেম্বার নির্বাচিত হওয়াতে সে নিজ অর্থায়নে রাস্তা করে দিচ্ছে। পুনর্নির্মাণ রাস্তার উচ্চতা ৪ ফিট প্রস্থ ১২ ফিট এবং দৈর্ঘ্য ২১শ’ মিটার কিন্তু সরেজমিনে তার কোনো চিত্র দেখা মেলে না আর। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার স্থানীয়দের ভিতর ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বরুনিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এই রাস্তা আসলে মেম্বার নিজে করেছে তার ব্যক্তিগত স্বার্থে কারণ হলো তার নিজ বাড়িতে যাওয়ার জন্য ভালো একটা রাস্তা প্রয়োজন আর সেজন্য তার বাড়ির আশেপাশের জমি থেকে তেমন মাটি না কেটে ড্রাম ট্রাক দিয়ে মাটি ফেলেছে আর তার বাড়ির পর থেকে সরকারি জমি থেকে মাটি না কেটে অন্যদের জমি থেকে জোর করে ১৫ ফিট গভীর করে মাটি কেটে রাস্তায় ফেলেছে। যারা বাঁধা কিংবা প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছে তাদের মানিকগঞ্জ থেকে সন্ত্রাসী এনে ভয়ভীতি ও মারধর করেছে। আমরা অসহায় দরিদ্র মানুষ হওয়ায় মোক্তার মেম্বারের দেওয়া এই যন্ত্রণা সহ্য করছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি বলেন, আমি গত মাসে হঠাৎ করে জমি দেখতে যাই তখন দেখি আমার জমি থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কাটছে আর মাটি কাটতে বাঁধা দিলে ভেকুর চালক আমাকে মারধর করে। সরকারি জমি থেকে মাটি না কেটে জোর করে আমার জমি থেকে মাটি কেটে রাস্তার উপর ফেলেছে কিন্তু যেভাবে রাস্তার উপর মাটি ফেলেছে, বৃষ্টি হলে এ মাটি থাকবে না শতভাগ, লাখ লাখ টাকা জলে যাবে।  

ভারারিয়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগের সভাপতি আব্দুল রউফ বাংলানিউজকে বলেন, এই ওয়ার্ডের মেম্বার মোক্তার আলী এই ২১শ’ মিটার রাস্তার করেছে এমপি কোটার টাকা দিয়ে এ বিষয়টি আমরা জানতাম না। জনগণের কষ্টের কথা চিন্তা করে আমি এই রাস্তা করে দিলাম। এই রাস্তার জন্য এতো টাকা বরাদ্দ দিয়েছে এমপি মহোদয় কিন্তু ৫ ভাগের এক ভাগের টাকাও খরচ না করে পুরো টাকা সে মেরে দিয়েছে। আমরা চাই এর সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তা না হলে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত হবে।

প্রকল্পের সভাপতি ও অভিযুক্ত মেম্বার মোক্তার আলী বাংলানিউজকে বলেন, এই প্রকল্পের সভাপতি ও ঠিকাদার আমি নিজেই এ বিষয়টি সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানেন। আপনি এই কাজটি নিজেই করেছেন এ বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান জানেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তার তো জানার কথা না কারণ কাজটা আমাকে দিয়েছে এমপি মমতাজ আর এই কারণেই তাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করি নাই।  

ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।  

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোহাম্মদ একরামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্প সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। তবে প্রকল্পের যে কমিটি থাকে তারা সকলেই মিলে এ কাজটি করতে পারেন। আপনার সহায়তায় প্রকল্পের সভাপতি নিজেই এককভাবে কাজ করেছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোনটি কেটে দেন।

মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দিয়ে থাকি তবে এ কাজের তদারকির জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রয়েছেন তিনিই মূলত এই কাজগুলোর দেখবাল করে থাকে। যদি কোনো কাজে কোন ধরনের ফাঁকি দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করে থাকে এবং তার ওই অপরাধ প্রমাণিত হলে তার যথাযথ শাস্তি হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২২
এনটি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।