ঢাকা, শনিবার, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘বঙ্গবন্ধু সৎ ছিলেন, কিন্তু দেশে সততার অভাব’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২২
‘বঙ্গবন্ধু সৎ ছিলেন, কিন্তু দেশে সততার অভাব’

ঢাকা: বঙ্গবন্ধু এক অনন্য ব্যক্তিত্ব উল্লেখ করে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কথা বলার যোগ্যতা আমার নেই। যে বিশ্বাসটি সব সময় আমি বুকে ধারণ করি, সেটি হলো- বঙ্গবন্ধু এসেছিলো বলেই আজ আমরা এখানে আছি।

বঙ্গবন্ধু নেই তো আমরাও নেই। আমি খুব বেশি ব্যাখ্যায় যেতে পারবো না।  

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু অনেক গুণে গুণান্বিত ছিলেন। তার সব গুণের মধ্যে একটি হলো সততা। বঙ্গবন্ধুর সততা নিয়ে কোনো দিন কেউ কোনো খারাপ কথা বলতে পারেনি পারবেও না। কারণ তিনি ছিলেন সৎ। কিন্তু বাংলাদেশে এই সততার অনেক ক্রাইসিস। এখন আমরা যে যেখানে, যে অবস্থায় আছি, মোটামুটি আমরা ধরে নিতে পারি, আমরা অসৎ। দুঃখ নিয়ে প্রায় আমাদের অতিরিক্ত আইজিপি আতিকের সঙ্গে এসব কথা আলোচনা করা হয়।

মঞ্চে উপস্থিত অতিথিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলনে, স্যার যদি ভুল হয় তবে মাফ করবেন। আমি নিজেকেও যুক্ত করেই কথাটি বলেছি। আমিও অসৎ।

শনিবার (২৬ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও মুজিব শতবর্ষে স্মারকগ্রন্থ ‘অনশ্বর পিতা’র মোড়ক উন্মোচন ও  ‘রং তুলিতে আঁকি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ’ শীর্ষক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

মুজিবশতবর্ষ, স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

ড. মইনুর রহমান চৌধুরী বলেন, একটি থিউরি আছে- করাপশন ইজ দ্য পার্ট অব ডেভেলপমেন্ট। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে জাতির উন্নতি করতে গেলে করাপশন সঙ্গে থাকবে। হয়তো বা আমাদের দেশে করাপশন আস্তে আস্তে কমবে। যাই হোক আমাদের এটা ভাবতে হবে, করতে হবে। আজকে অর্থনৈতিকভাবে দেশ উপরে উঠে যাচ্ছে, কিন্তু বারবার আমাদের যে বিষয়টি পীড়া দিচ্ছে সেটা হলো আমাদের অসততা।

ড. মইনুর রহমান চৌধুরী আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন, আজকে আমরা এই পবিত্র দিনে বঙ্গবন্ধুর অনেক গুণাবলীর মধ্যে তার একটি গুণ, ‘সততা’ আমাদের সব জায়গায় প্রতিষ্ঠা করতে পারি কিনা সেটি আমাদের ভাবার বিষয়। তার (বঙ্গবন্ধুর) এই গুণাবলিটি আমাদের বলা, করা, চলাসহ সবকিছুর মধ্যে আনতে পারি কিনা এই আহ্বানটি সবার রাখছি।

এখানে যারা উপস্থিত রয়েছেন, হয়তো বা আমার বলা এই কথাটি আপনাদের মনে কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু এটাই সত্য’- যোগ করেন তিনি।

আরেকটা বিষয় আমি বলার চেষ্টা করব। গতকাল আইজিপি মহোদয় বলছিলেন, সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কথা। একটা জাতি যখন অর্থনৈতিকভাবে ওপরে উঠে যায় তখন ওই জাতির সাংস্কৃতিক বিপ্লব শুরু হয়ে যায়। যেমনটা চীনের ক্ষেত্রে হয়েছে। তাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে ওপর ওঠার পরেই সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটেছে। আজ বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ চীন।

তিনি একটি উদাহরণ তুলে ধরে বললেন, বুশ একবার ইরাকে গিয়ে সুশীল সমাজের সামনে সেমিনারে কথা বলছিলেন। তখন এক সাংবাদিক তার কথা শুনে পেছন থেকে জুতা ছুড়ে মেরেছিলেন। কাজেই গতকাল আইজিপি মহোদয় দেশে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কথা বলছিলেন। দেশে সাংস্কৃতিক বিপ্লব করতে হবে এটা ঠিকই। কিন্তু মাঝে মধ্যে জুতা ছুড়ার ব্যবস্থাও রাখতে হবে।

তিনি কষ্ট নিয়ে বলেন, ‘আজ কত অপদার্থ জাতি আমরা। যার বদৌলতে (বঙ্গবন্ধু) যার কারণে, যার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেলাম, স্বাধীনতা পেলাম। কিন্তু আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও দেশে এমনও লোক আছে, যে স্বাধীনতার বিপক্ষে কথা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অপমানজনক কথা বলেন। এটা ভাবতেও কষ্ট হয়।

নিজের প্রসঙ্গে ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমার চাকরি জীবন চলছে ৩৪ এর বেশি। আর পাঁচ মাস সময় রয়েছে। তারপর অবসরে চলে যাবো। সম্ভবত আজ এই ডায়েসে দাঁড়িয়ে কথা বলটাই হয়তো শেষ। আমাকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ব্যক্তিগতভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমার চাকরি জীবনে প্রায় ৩৫ বছরে এই দেশ আমাকে যা দিয়েছে, দেশ থেকে যা পেয়েছি তার বদৌলতে আমার যতটুকু করার দরকার ছিল তা করতে পারিনি। এটা আমার একটি কষ্ট।

পরিশেষে বলবো, বঙ্গবন্ধু এক বিশাল ব্যক্তিত্ব। তাকে সেভাবে আমরা স্মরণ করতেও পারবো না, সম্ভব নয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কিছু কিছু দিক নিয়ে যদি পাঠ্যপুস্তকে তুলে দেওয়া যায়। তবে শিশু শিক্ষার্থীরা তার সম্পর্কে জানতে পারবে। এটি করা গেলে জাতি উপকৃত হবে।

আজ সকালেই আমি বলছিলাম, আমরা এক বিচিত্র জাতি, বিকৃত জাতি যে বঙ্গবন্ধুর বাবার জমিটিও খাস খতিয়ানে চলে যায়! যাই হোক এগুলো আবেগি কথা, কিন্তু সত্য। এই জাতি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, আবার শেখ হাসিনার কি অন্যায়, তখন তারও এক্সটেনশন ছিল না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, স্যার রাজনৈতিক ভাবে যা যা করার প্রয়োজন আপনারা করবেন। কিন্তু এই দেশে যদি আবার ঝামেলা হয়, তবে দেখবেন আবার এলোমেলো দিকে চলে যাচ্ছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থেই বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য লড়েছেন, জীবন দিয়েছেন। তার স্বপ্ন যাতে বাস্তবায়ন হয়, সেটি আশা ব্যক্ত করছি।

বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।  

অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ, র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২২
এসজেএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।