দুই বছর আগেও এক কেজি গরুর মাংস পাওয়া যেত ৫০০ টাকায়। বর্তমানে সেই মাংস কিনতে হচ্ছে ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা।
মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম কেজিতে বেড়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। ক্রেতারা বলছেন, শবেবরাতের দিন একলাফে কেজিতে ৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয় গরুর মাংস। পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে কেজিতে আরো ৩০ থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হতো ৬০০ থেকে ৬২০ টাকা কেজি।
মধ্যম আয়ের মানুষও এখন আর গরুর মাংস কেনার সাহস করছে না। অনেক পরিবার শুধু বাড়িতে অতিথি এলে নিরুপায় হয়ে গরুর মাংস কেনার সাহস দেখায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে এই মানুষগুলোর সাধ্যের মধ্যে আর থাকবে না গরুর মাংস।
অথচ দেশে প্রতিবছর বাড়ছে গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়ার উৎপাদন। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় চার লাখ পশু উৎপাদন বেড়েছে। এর মধ্যে এক লাখ ৫৪ হাজার গরু। চাহিদার তুলনায় মাংস উদ্বৃত্ত ১০ লাখ মেট্রিক টন। তার পরও গরুর মাংসের দাম বাড়ছে। মাংস কিনতে নাভিশ্বাস ভোক্তাদের।
খামারিরা বলছেন, দেশের বাজারে গোখাদ্যের দাম ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এ কারণে বাড়ছে গরুর মাংসের দাম।
রোবাবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কোনো বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, মানভেদে কোনো বাজারে ৬৬০ টাকা কেজি।
ভাটারা থানার দক্ষিণ কুড়িল এলাকার ইয়ার হোসেন গোস্ত বিতানের মালিক ইয়ার হোসেন বলেন, ‘গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ৬৮০ টাকার নিচে বিক্রি করলে আমাদের লস হয়। গরুর দাম বেড়ে যাওয়ায় মাংসের দামও বেড়ে গেছে।
কারওয়ান বাজারের মাংস ব্যবসায়ী শফিকুল বলেন, ‘প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৬০ থেকে ৬৮০ টাকা বিক্রি করছি আমরা। কারণ বর্তমানে গরুপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় মাংসের দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই।
সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাব বলছে, বেশ কিছুদিন ধরে গরুর মাংসের দাম বাড়ছে। সংস্থাটির গতকালের বাজারচিত্রে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দেখানো হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, দুই সপ্তাহ আগেও গরুর মাংসের কেজি ছিল ৬২০ থেকে ৬৫০ টাকা। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সেটি কেজিতে ৫০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন রফিকুল ইসলাম। কুড়িলে গরুর মাংস কিনতে এসেছিলেন তিনি। জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, গরুর মাংসের দাম বেড়ে যে পর্যায়ে গেছে, ২০-২৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরিজীবীদের গরুর মাংস খাওয়ার দিন শেষ। আগে মাসে দু-একবার খাওয়া গেলেও এখন আর গরুর মাংস কিনে খাওয়ার অবস্থায় নেই।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান বলেন, গোখাদ্যের দাম বাড়ায় বাজারে গরুর মাংসের দাম বাড়ছে। বর্তমানে বাজারে গোখাদ্যের দাম ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এতে বেড়ে গেছে গরুর উৎপাদন খরচ। সরকার গোখাদ্যের দাম কমানোর উদ্যোগ নিলে বাজারে মাংসের দাম কমে আসবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। কৃষক বা খামারির কাছ থেকে কসাই পর্যন্ত একটি গরু পৌঁছতে তিন-চার হাত বদল হয়। প্রতি হাত বদলে বাড়ে গরুর দাম।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের (ডিএলএস) হিসাব মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে পশু উৎপাদন হয় পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ ২৬ হাজার। সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২২
নিউজ ডেস্ক