রংপুর: ঢাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত গরিবের ডাক্তারখ্যাত ডা. বুলবুলের হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে তার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনরা। এটি নিছক ছিনতাই নয় বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলেও দাবি তাদের।
সোমবার (২৮ মার্চ) দুপুরে রংপুরের ভগিবালাপাড়ায় নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলেছেন তার পরিবারের সদস্য ও বন্ধুরা।
এর আগে ভোরে ঢাকা থেকে তার মরদেহ রংপুরে পৌঁছায়। পরে দুপুরে জানাজা শেষে তার বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
সকালে ঢাকা থেকে মরদেহ বহনকারী ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সটি রংপুর নগরীর ভগিবালা পাড়ার নিজ বাড়িতে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার স্বজনরা। এলাকার প্রিয় বুলবুলকে শেষবারের মত দেখতে ছুটে আসেন এলাকাবাসী এবং বন্ধুরা।
নিহতের ছোট ভাই বকুল বলেন, সকালে বড় ভাইয়ের মরদেহ আসে। বাদ জোহর রামপুরা জামে মসজিদে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বুলবুলের ফোনের কললিস্ট অনুসন্ধান করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে। প্রশাসন একটু খতিয়ে দেখলে আসল রহস্য উদঘাটিত হবে। চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি বুলবুল ঠিকাদারির কাজ করতেন। নোয়াখালীতে একটি বড় ঠিকাদারির কাজের জন্য বুলবুল ভোরে বাড়ি থেকে বের হন। দুর্বৃত্তরা আগে থেকেই সেটি জানত।
বুলবুলের স্ত্রী শোকে কাতর হলেও পরিবার ও সন্তানদের নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ‘এখন আমার কী হবে? সন্তানদের পড়াশোনাসহ পরিবার চলবে কীভাবে? পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন তিনি (স্বামী)। ভোরে বাড়ি থেকে নোয়াখালীর উদ্দেশে রওনা হওয়ার কিছুক্ষণ পর খবর আসে, তিনি খুন হয়েছেন। এটা বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। সরকারের কাছে এটাই আমার আকুতি।
এদিকে সন্তান হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তি চান আহমেদ মাহি বুলবুলের (৩৪) মা বুলবুলি বেগম। তিনি বুলবুলের সন্তানের পড়ালেখার দায়িত্ব সরকারকে নেওয়ার অনুরোধ জানান। এসময় তিনি বুলবুলের সন্তানকে কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ডা. বুলবুলের সহপাঠী ডা. মোস্তফা আলম বলেন, আমরা অকালে একজন ভালো মানুষকে হারালাম। আমাদের এসএসসি ৯৭ ব্যাচের সারাদেশের বন্ধুদের দাবি হত্যাকারীকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেইসঙ্গে তার পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
রোববার (২৭ মার্চ) সকালে ঢাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন গরিবের ডাক্তার আহমেদ মাহি বুলবুল। বুলবুলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। চাকরিকালীন ১৯৯৯ সালে তিনি মারা যান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন বুলবুল। ১৯৯৭ সালে রংপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকার মগবাজারে একটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে প্র্যাকটিস শুরু করেন বুলবুল।
২০০৮ সালে দিনাজপুরে বিয়ে করেন তিনি। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। সামী নামে দেড় বছর বয়সী ছেলে ও আয়ন নামে ৬ বছরের মেয়ে রয়েছে বুলবুলের।
** সন্তানদের জন্য গরুর খাঁটি দুধ আনা হলো না ডা. বুলবুলের
** শেওড়াপাড়ায় ছুরিকাঘাতে চিকিৎসক খুন
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২২
আরএ