ঢাকা: রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় ‘গরিবের ডাক্তার’ খ্যাত দন্তচিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতাররা হলেন—মো. রায়হান ওরফে সোহেল আপন (২৭), রাসেল হোসেন হাওলাদার (২৫), আরিয়ান খান হৃদয় (২৩) ও সোলায়মান (২৩)।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মিরপুর মডেল ও পল্লবী থানা এলাকা এবং ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন কাউন্দিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে চিকিৎসক বুলবুলের খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোন ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করা হয়।
ডিবি জানায়, পশ্চিম শেওড়াপাড়ার আনন্দবাজার এলাকা থেকে শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড যাবার পথে চিকিৎসক বুলবুলের রিকশার গতি রোধ করে ছিনতাইকারীরা। এ সময় তার ব্যবহৃত স্যামসাং মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে বাধা দিলে তাকে ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখে শুধু মোবাইল ফোনটি নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
বুধবার (৩০ মার্চ) বিকেলে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, নিহত বুলবুল আহমেদ পেশায় একজন দন্তচিকিৎসক এবং প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ব্যবসায়ী। তিনি ১৫/২০ দিন আগে নোয়াখালী এলাকায় একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ পান।
গত ২৭ মার্চ সকাল সোয়া ৫টার দিকে নোয়াখালী যাওয়ার উদ্দেশে পশ্চিম শেওড়াপাড়াস্থ আনন্দবাজার এলাকার বাসা থেকে শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার উদ্দেশে রিকশায় রওয়ানা হন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে পশ্চিম কাজীপাড়ার বেগম রোকেয়া সরণি নাভানা ফার্নিচার শোরুম ও আমসিকো ফার্নিচার শোরুমের সামনে পৌঁছালে গ্রেফতার চার ছিনতাইকারী রিকশার গতিরোধ করে বুলবুলের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ
ভিকটিম বাধা দিলে ধারালো ছুরি দিয়ে তার ডান হাঁটুর ওপর আঘাত করে গুরুতর জখম করে। তবে তার চিৎকারের কারণে শুধু মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। পরে বিহঙ্গ বাসের চালক ও হেলপারের সহযোগিতায় ভিকটিমকে প্রথমে স্থানীয় আল-হেলাল হাসপাতাল ও পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গ্রেফতার চারজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, গত ২৭ মার্চ ভোর চারটায় গ্রেফতার ৪ জনসহ মোট পাঁচজন মিরপুর পশ্চিম কাজীপাড়া এলাকায় ডাকাতির উদ্দেশ্যে জড়ো হন। আসামিরা প্রত্যেকেই পেশাদার ছিনতাইকারী। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, নিহত বুলবুলের ফার্মগেট যাওয়ার কথা থাকলেও উল্টোদিকে যাওয়ার বিষয়টিও আমলে নিয়ে আমরা তদন্ত করছি। প্রাথমিকভাবে গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে মনে হয়েছে তারা পেশাদার ছিনতাইকারী। আর দন্তচিকিৎসক বুলবুল হত্যার ঘটনাটি অজানা কারণে খুন হিসেবে তদন্ত শুরু হয়েছে। এটা হত্যার পাশাপাশি ডাকাতি মামলা হিসেবে টার্ন করবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, কোনো ঘটনা ঘটলে গোয়েন্দা পুলিশের কাজ ক্লু উদ্ধার করা ও কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করা। আর এই ঘটনার প্রমাণ হলো, চারজনকে গ্রেফতার ও নিহতের মোবাইলে ফোন উদ্ধার করা এবং তাদের দেখানো মতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। মামলা তদন্তের সময় সবদিকই বিবেচনা করা হবে, তবে প্রাথমিকভাবে এটিকে ছিনতাই বলে মনে হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
চিকিৎসক বুলবুল হত্যার ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২২
পিএম/এমজেএফ