গাইবান্ধা: টানা তিন ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে চিকিৎসায় না পেয়ে মারা গেলেন প্রসব বেদনায় কাতর হেলেনা বেগম (২৫)। জলচৌকিতে করে দীর্ঘ নয় কি.মি. দুর্গম চরের তপ্ত বালি পথ হেঁটে পাড়ি দিয়েও তাকে নেওয়া সম্ভব হয়নি কোনো ক্লিনিক-হাসপাতাল, কপালে জোটেনি চিকিৎসা সেবা।
বুধবার (৩০ মার্চ) দুপুর দেড় টার দিকে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি ঘাটে সীমাহীন কষ্ট-অভিমান নিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান হেলেনা ও তার অনাগত তৃতীয় সন্তান।
হেলেনা ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি ইউনিয়নের চর কালুরপাড়া গ্রামের দিনমজুর সুজা মন্ডলের স্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে চর কালুরপাড়া গ্রামে তাদের তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, হেলেনার রেখে যাওয়া মেয়ে রুমি আক্তার (৮) ও ছেলে মনির (৪) মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অঝরে কাঁদছে। তাদের বুকে নিয়ে শান্তনা দিচ্ছেন বাবা সুজা।
সুজা বাংলানিউজকে জানান, বুধবার সকাল ৯টার দিকে নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী হেলেনার রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তখন তাকে ফুলছড়ি বা গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও একটা ঘোড়ার গাড়ি পাওয়া যায়নি। নিরুপায় হয়ে হেলেনাকে জলচৌকিতে উঠিয়ে কাঁধে করে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমিসহ আমার ভাই জসু মন্ডল, রওশন মন্ডল ও ভাগ্নে আসাদুল ফুলছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেই। দুই জন ক্লান্ত হয়ে পড়লে বাকি দুই জন জলচৌকি কাঁধে নিয়ে চলতে থাকি। পথে প্রসব বেদনা-রক্তক্ষরণের কারণে হেলেনা কাতরাচ্ছিল। এভাবে দীর্ঘ নয় কিলোমিটার পেরিয়ে দুপুর দেড়টায় ফুলছড়ি ঘাটে গিয়ে পৌঁছাই। তার আগেই হেলেনা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। দ্রুত তাকে ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না নিয়ে স্থানীয় বাজারের এক ডাক্তারের কাছে নেওয়া হলে চিকিৎসক হেলেনা ও তার গর্ভের সন্তানকে মৃত ঘোষণা করেন।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, সময় মতো হাসপাতালে নিতে ব্যর্থ হওয়ায় হেলেনা ও তার গর্ভের সন্তানকে হারাতে হলো। যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব ও হাতের কাছে কোনো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র না থাকায় স্ত্রী-সন্তানকে হারাতে হলো।
ফুলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হান্নান মন্ডল বাংলানিউজকে জানান, বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া চরবাসীর চলাচলের প্রধান বাহন নিজের দু'টি পা। একমাত্র বিকল্প ঘোড়ার গাড়ি থাকলেও জরুরি মুহূর্তে সেটাও মেলে না। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত এসব ঘটনা ঘটে থাকে যা খুবই বেদনাদায়ক।
ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ বাংলানিউজকে জানান, দুর্গম চরের কেউ অসুস্থ হলে জলচৌকিতে শুইয়ে কাঁধে করে মূল ভূখণ্ডে আনতে হয়। যা অনেক কষ্ট ও সময় সাপেক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২২
কেএআর