ফরিদপুর: কেউ রিকশাচালকের ছেলে কেউবা ভ্যানচালকের, কেউবা আবার দিনমজুরের সন্তান। কিন্তু তাতে কী? গন্তব্যে পৌঁছাতে কোনো কিছুই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি তাদের সামনে।
কোনো প্রকার দালালি বা সুপারিশ ছাড়া নির্বাচিত হতে পেরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রার্থীরা। স্বচ্ছতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে কয়েক হাজার আবেদনকারীর মধ্য থেকে ৫৩ জনকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করে জেলা পুলিশ।
কোনো প্রকার দালালি বা আর্থিক লেনদেন ছাড়াই চাকরি পেয়ে আবেগ তাড়িত প্রার্থীরা। যাদের কাছে চাকরিটি ছিল সোনার হরিণ। নির্বাচিত হতে পেরে অশ্রুসিক্ত নয়নে পুলিশ সুপার ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান অনেকেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাকরি পাওয়া এক ভ্যানচালকের ছেলে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি ১২০ টাকার বিনিময় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কনস্টেবল পদের এ চাকরি পাবো। গত বছরও চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তখন মৌখিক পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ হতে পারিনি। কিন্তু আশা ছাড়িনি। যখন আবেদন করেছিলাম তখন অনেকের কাছে অনেক কথাই শুনেছি। তদবির লাগে, টাকা লাগে। এসব ছাড়া চাকরি হয় না। আমার বাবা একজন ভ্যানচালক। আমি টাকা দিবো কিভাবে। কিন্তু মনের জোরে এবং ফরিদপুর পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান স্যারের আন্তরিকতায় মাত্র ১২০ টাকায় আমি নির্বাচিত হয়েছি। এজন্য আমি ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান স্যার ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
জেলা শহরের পিতৃহারা চাকরি পাওয়া এক প্রার্থী বলেন, আমি অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের একজন সন্তান। আমরা এক ভাই দুই বোন। আমার বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। আমাদের ভিটেবাড়ি ছাড়া কোনো সম্পত্তি নেই। সংসার চালাতে গিয়ে আমরা খুব অভাব অনটনে আছি। আমি অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছি এবং কনস্টেবল পদের জন্য আবেদন করি।
মনের জোর ও পুলিশ সুপারের আন্তরিকতায় মাত্র ১২০ টাকার বিনিময়ে আমি প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হতে পেরেছি। যা আমার জন্য একেবারেই স্বপ্নের মতো। আমার পক্ষে কাউকে ১০ টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তারপরও আমার বিশ্বাস ছিল আমার যোগ্যতায় আমি চাকরি পাবো। সেই বিশ্বাসের জোরে আবেদন করেছি এবং নির্বাচিত হয়েছি।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশে নিয়োগ পেতে ব্যাংক ড্রাফট বাবদ ১০০ টাকা ও অনলাইন চার্জ ২০ টাকাসহ মোট ১২০ টাকা খরচ হয়েছে প্রার্থীদের। এদের মধ্যে অনেকে অটোচালক, এতিম এবং কেউ দিনমজুরের ছেলে রয়েছেন। মেডিক্যাল পরীক্ষা শেষে তাদের ট্রেনিংয়ে পাঠানো হবে।
জানা যায়, গত ৯ মার্চ প্রথম শারীরিক পরীক্ষা শেষে ৩৯৯ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হন। পরে ২০ মার্চ মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে উত্তীর্ণ হন ৫৩ জন। অপেক্ষমাণ রয়েছেন আরাও ১৬ জন।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলিমুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, কনস্টেবল নিয়োগে পুলিশের আইজি (পুলিশ মহাপরিদর্শক) বেনজীর আহমেদ স্যার আমাদেরকে যে সিস্টেম চালু করে দিয়েছেন তা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট। আমাদের কাছে তদবির বলেন আর টাকা-পয়সা দেওয়ার বিষয়ে বলেন এ সিস্টেমটি এসব প্রটেক্ট করতে সক্ষম।
এসপি বলেন, আমরা কোনো প্রকার তদবির তোয়াক্কা না করে যে সমস্ত প্রার্থীরা শারীরিকভাবে যোগ্য ও মেধাসম্পন্ন, যারা সকল পরীক্ষায় ভালোভাবেই উত্তীর্ণ হয়েছেন শুধু তাদেরকেই নির্বাচিত করেছি। শতভাগ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার মধ্যদিয়ে মেধা ও যোগ্যতাভিত্তিক এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধে নিয়োগ পরীক্ষার আগে থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা সতর্ক ছিলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১২০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২২
এনএইচআর