সাভার (ঢাকা): সাভার পৌরসভা এলাকায় সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষণার্থী প্রত্যেককে সরকারের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন দেওয়ার কথা বলে ৩৯ জন নারীর কাছ থেকে প্রায় দুই লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে রুপসী বাংলা ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে। প্রতারক চক্রটি বেছে বেছে নারীদের টার্গেট করে এই কাজটি করেছে।
শুক্রবার (০১ এপ্রিল) সকালে এই প্রতারণার বিষয়ে কথা হয় ভুক্তভোগী নারীদের সঙ্গে। এ সময় তারা জানান, পৌর এলাকার ব্যাংক টাউনে একটি ভবনে অবস্থিত রুপসী বাংলা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রতষ্ঠানের একটি রুপসী বাংলা টিভি ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রও রয়েছে।
ভুক্তোভোগী নারীরা জানান, ১০০ টাকার বিনিময়ে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলে সাভারের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং ও লিফলেট বিতরণসহ বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। বিজ্ঞাপন দেখে নারীরা সাবলম্বী হতে এই প্রতিষ্ঠানটি লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখানে তারা প্রশিক্ষণের জন্য ভর্তি হন। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ শেষে ৫ হাজার টাকা দিলে সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যককে একটি করে সেলাই মেশিন দেওয়ার কথাও বলেন তারা। তাই ১৩৫ তম ব্যাচে ৩৯ জন প্রশিক্ষণার্থী মোট ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা দিয়ে শেলাই প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন পাওয়ার আশায় ভর্তি হন।
এই টাকার বিপরীতে তাদের প্রত্যেককে ১৫০০ টাকার রশিদ দেয় কর্তৃপক্ষ। বাকি টাকার কোনো রশিদ দেয় না। টাকা নেওয়ার পর কয়েক দিন সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে পরে বন্ধ করে দেয়। কয়েক মাস পর সেলাই মেশিন তো পরের কথা আসল টাকা চাইতে গেলে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ডা. সাজিদ হাসান রানা ভুক্তভোগী নারীদের নামে মামলা দেওয়ারও হুমকি দেন।
রুপসী বাংলা ফাউন্ডেশন নামের এই প্রতারণার শিকার লিমা আক্তার, তানজিলা, বিউটি রায়, ফিরোজা বেগম, রিমি, সানজিদা, মিম, রুক্সি, ফাতেমা, বন্যা, মুসলিমা, সুমি আক্তার, সাদিয়া, রিয়াসহ আরও ৩৯ জন নারী।
ভুক্তভোগী নাজনীন নাহার বাংলানিউজকে বলেন, ভুয়া এই প্রতিষ্ঠানটি চেয়ারম্যান ডা. সাজিদ হাসান করোনাকালে এমবিবিএস চিকিৎসকের পরিচয় দিয়ে অনলাইনে স্বাস্থ্যসেবা দেন। এজন্য তার প্রতি সবার বিশ্বাস ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আমাদের সঙ্গে টাকা নিয়ে এমন প্রতারণা করলেন। মেশিন দেওয়ার কথা থাকলেও দেননি। পরে টাকা চাইতে গেলে আমাদের আরও নানাভাবে ভয় দেখান সাজিদ হাসান।
এই প্রতারণা বিষয়টি অস্বীকার করে রুপসী বাংলা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. সাজিদ হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আমি প্রায় বিশ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছি। এমন কেনো অভিযোগ আজ পর্যন্ত হয়নি। এবারের বিষয়টি মিথ্যা, কারো কাছে টাকা নেওয়া হয়নি। সেলাই মেশিন দেওয়ার কথা তো দূরে থাক। আমাকে অযথা হয়রানি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সাভার উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা শিবলী জামান বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি আমাদের সমাজ সেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধিত কিনা তা দেখছি। যদি নিবন্ধিত হয় বিষয়টি তদন্ত করা হবে। আর অনিবন্ধিত হয় তবে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
থানায় অভিযোগ বা সাধারণ ডাইয়েরির ব্যপারে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার একজন নারী এমন প্রতারণার বিষয় এনে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। আমরা তদন্ত করে পরে জানাবো।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২২
এসএফ/এসআইএস