ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

তিন ফসলি জমি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান কৃষকরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২২
তিন ফসলি জমি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান কৃষকরা

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় আইন ও প্রশাসনের কোনো প্রকার তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়তই তিন ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসবে মেতেছে প্রভাবশালী একটি মহল। এর ফলে ওই এলাকার কৃষি জমি ভাঙন ও জমিতে ফসল উৎপাদন করতে না পেরে অনেকটাই নির্বিকার হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।

অন্যদিকে, লতব্দী ইউনিয়নের উত্তর পাশে ধলেশ্বরী নদীর পাড় ঘেঁষে ১২ থেকে ১৫টি অবৈধ ইটের ভাটা প্রভাবশালী ও তাদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। এসব অবৈধ ইটের ভাটায় স্থানীয় গাছপালা, কাঠ-লাকড়ি অথবা পরিবেশ দুষণকারী পুরনো টায়ার পোড়ানো হচ্ছে। যার ফলে ইট ভাটার ধোঁয়ায় পরিবেশ এমনভাবে নষ্ট হচ্ছে যে ফসলি জমিতে কোনো ফসলই হচ্ছে না। পাশাপাশি মানুষ বিভিন্ন রোগ, শ্বাস কষ্ট, হাঁচি কাশিসহ চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এই অবস্থায় এসব প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ও কৃষকদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না কেউ। অসহায় হয়ে সবাই এখন প্রধানমন্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কেননা প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন, কোন ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হলে ফসলি জমির বিকল্প নেই।

শুক্রবার (১ এপ্রিল) রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের প্রধান ফটকের সামনে অবৈধধভাবে ফসলি জমির মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন এবং পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় প্রতিরোধে এক মানববন্ধনে এ হস্তক্ষেপ চান কৃষকরা।

মানববন্ধনের পাশাপাশি এ বিষয়ে দিনব্যাপী ফটো সাংবাদিক ফোজিত শেখ বাবুর আলোকচিত্র প্রদর্শনী “কৃষক বাঁচাও” প্রদর্শিত হয়। দুপুর ১১টা থেকে এই প্রদর্শনী চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।  

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন ভুক্তভোগী এলাকা সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দী ইউপি চেয়ারম্যান হাফেজ মোঃ ফজলুল হক। এছাড়া ভুক্তভোগী সাধারণ কৃষক, জনগণ ও মুন্সিগঞ্জের ১৪টি সংগঠনের কর্মীরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

এই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহম্মদ। ফ্রান্সের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান সরকার বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর এর কিউরেটর ও সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান (এন আই খান) প্রধান আলোচক হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তিন ফসলি জমি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রশাসন নামকাওয়াস্তে অভিযান পরিচালনা করলেও পুরোপুরি আন্তরিকতা দেখা যায়নি। অভিযোগ রয়েছে- যারা এই অবৈধ ব্যবসা করছেন তারা প্রতিদিন টাকা দেন। অর্থের বিনিময়ে প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে নেন। অভিযানের বিষয়টি এসব কর্মকর্তারা আগেই ভূমিখেকোদের জানিয়ে দেন। ফলে আগে থেকেই তারা সাবধান হয়ে যান।

বক্তারা বলেন, মুন্সিগঞ্জের বাসাইল, লতব্দী ও বালুরচরে এ যাবৎ প্রায় ৩০০ বিঘা ফসলি জমির মাটি কেটে সমুদ্রের মতো করা হয়েছে। বর্তমানে আরো প্রায় ১০০-১৫০ বিঘা জমির মাটি কাটার মহাপরিকল্পনা চলছে।

লতব্দী ইউনিয়নের উত্তর পাশে ধলেশ্বরী নদীর পাড় ঘেঁষে ১২ থেকে ১৫টি অবৈধ ইটের ভাটা প্রভাবশালী ও তাদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। যা গ্রামের মাত্র ২শ গজের মধ্যে।  

স্থানীয় প্রভাবশালীরা জমির মাটি ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীর করে কেটে নিয়ে ভাটায় সরবরাহ করছে। ফলে বিক্রমপুরের আলু বলে খ্যাত জেলার যে লক্ষ্যমাত্রা তা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। সরিষা, ডাল, ধানসহ কোনো শস্যই চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফসিল জমি থেকে উত্তোলকৃত মাটি ইট ভাটায় নেওয়ার জন্য মাহেন্দ্রা গাড়ি (বড় চাকার এক ধরনের গাড়ি যা সাধারণ অমসৃন রাস্তা ব্যবহার করা হয়) ব্যবহার করা হচ্ছে। এই গাড়ির চাকার আঘাতে স্থানীয় সরকারের অর্থে ও ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে যে গ্রামীণ সড়ক রয়েছে তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যে সড়কের মেয়াদ ১০ বছর ধরা হয়েছিল, তা ১ বছরেরই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তায় মাঝখানে ও পাশে বড় বড় ধরনের গর্ত তৈরি হয়েছে। পুরো রাত জুড়ে রাস্তা দিয়ে ভ্যেকু ও গাড়ি চলে। ফলে রাতের ঘুমানোর সুযোগ নেই।

চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, পরিবেশক অধিদপ্তরে অভিযোগ করাসহ স্থানীয়ভাবে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করা হয়েছে। উপরোক্ত সকলকে স্মারক লিপির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।

কোনো প্রতিকারই মিলেনি বরং প্রতিবাদকারীদের প্রকাশ্যে মারধর করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে ভূমিদস্যুরা।  স্থানীয় প্রশাসন কোনো এক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে।

এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং হস্তক্ষেপ কামনা করছি যাতে এই সমস্যা সমাধান হয়।

তারা জানান, এই এলাকায় মাটি কাটার ব্যবসা শুরু করেন বাসাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম (যুবরাজ)। তার ছেলে মোঃ রুবেল মাটি কাটা চালানোর জন্যা ক্যাডার বাহিনী গঠন করে যাতে ৪০/৫০ জন যুবক থাকে। পরবর্তীতে চেয়ারম্যান এর ছেলে মোঃ রুবেল মাটি কাটা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেন।

বর্তমানে মিজানের নেতৃত্বে শাহিন খান, মিন্টু বেপারী, (মধ্য রামকৃষ্ণদী নিয়ন্ত্রণ), শান্ত খানের নেতৃত্বে আজিম খান, নাসির খান (নাইস্যা), (রামকৃষ্ণদীর কবরস্থান ও পশ্চিম চক নিয়ন্ত্রন), ইকবাল ও জহিরের নেতৃত্বে (পশ্চিম রামকৃষ্ণদী নিয়ন্ত্রণ) ব্যবসা পরিচালনা হচ্ছে। পুরো বিষয়গুলো সমন্বয় করছেন স্থানীয় বর্তমান ইউপি মেম্বার শামসুদ্দিন খান খোকন (খোকন মেম্বার)।

অনুষ্ঠানে মহসিন আহমেদ স্বপনের সঞ্চালনায় এসময় বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় ২শ ভুক্তভোগী জনগণ অংশ নেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২২
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।