ঢাকা: রাজধানীর গণপরিবহনে অব্যবস্থাপনা নিয়ে সংসদে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ও পরিবহন মালিক নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গার সমালোচনা করেছেন তিনি।
রোববার (৩ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুজিবুল হক চুন্নু।
তিনি বলেন, ফ্লাইওভারে প্রাণ গেল নর্থসাউথ ইউনির্ভাসিটির ছাত্রী আয়শা মমতাজ মীমের। ফ্লাইওভারে একটি গাড়ির ধাক্কায় মেয়েটি মারা যায়। গত বুধবার একটা পুরনো লক্কর-ঝক্কর বাস, যার কোনো ব্রেক পর্যন্ত নাই, সেই বাস ব্রেক ফেল করে একটি রিকশাকে ধাক্কা দেয়। সেখানে বাচ্চা মেয়ের সামনে তার মা মরিয়ম গাড়ির চাকার নিচে পড়ে মারা যায়। গত মঙ্গলবার মিরপুর নেভি মার্কেটের সামনে বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারান সাবিনা ইয়াসমিন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার অনেক উন্নয়নের দাবিদার। হ্যাঁ, উন্নয়ন অনেক করেছে কিন্তু রাজধানীতে ট্রান্সপোর্টের একটা সুষ্ঠু নীতিমালা আজ পর্যন্ত আমরা চোখে দেখি নাই। ঢাকা শহরে ঘর থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নাই। এই ঢাকা শহরে যে সমস্ত বাস চলে বেশির ভাগই পুরোনো বাস, লক্কর-ঝক্কর, লাইসেন্স নাই এবং কোনো আইন মানে না। রাস্তাঘাটে একেবারে অরাজক অবস্থা করে রাখে। এতে মানুষের মধ্যে ভয়, ত্রাসের সৃষ্টি হয়েছে।
চুন্নু বলেন, আমার পাশে বসে আছে বাংলাদেশ বাস ওনার্স সমিতির সভাপতি (মশিউর রহমান রাঙ্গা)। ওনাদের বলবো, আপনারা মানুষের প্রতি দয়াবান হোন। যে সমস্ত গাড়ির ব্রেক নাই, পুরোনো ইঞ্জিন, রঙ নাই, ভুলভাবে গাড়ি চালায় এগুলো কেউ দেখে না। সরকারের সঙ্গে কি কোনো যোগসাজশে আপনারা জনগণকে কষ্ট দিচ্ছেন? সড়ক পরিবহন মন্ত্রী পদ্মা ব্রিজসহ অনেক উন্নয়ন করেন, কিন্তু আপনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ ট্রান্সপোর্টের বিষয়ে। ২৪ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স আজকে আটকা। ঢাকা শহরে আজকে ভালো বাস নাই। সরকারের কি ৫০০ এক হাজার নতুন বাস ঢাকা শহরে নামানোর সক্ষমতা নাই। মানুষ নিজের টাকা দিয়ে টিকিট কিনে গাড়িতে যাবে, বাসে যাবে, টাকা দিয়ে টিকিট কিনে লাইন দাঁড়িয়ে কোনো বাস নাই। এত অপ্রতুল পরিবহন, এই বিষয়টায় দৃষ্টি দেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি।
এর পর মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, খানিকক্ষণ আগে আমার কলিগ, আমি ওনার আগে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ছিলাম দুই বছর। তার পর তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন—সেই ক্ষোভেই কিনা, আমি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি সেই ক্ষোভে তিনি বললেন কিনা বুঝতে পারলাম না। হঠাৎ করে পরিবহনের কথাটা বললেন, সভাপতি পাশেই রয়েছেন তিনি জানেন। আমাদের ঢাকার যে অবস্থা, এক সময় পরিবহনগুলো উত্তরা পর্যন্ত ১৫-১৬টি পর্যন্ত ট্রিপ দিতো। এখন গাড়িগুলো তিন ট্রিপের বেশি করতে পারে না যানজটের কারণে। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে হোক বা যে কোনো কারণেই হোক গতির সীমা কমে গেছে এবং গাড়িগুলো সেভাবে চলতে পারে না। এইগুলো থেকে এক সময় যে আয় হোতো সেই আয় অনেক কমে গেছে। তিনি বলেছেন লক্কর-ঝক্কর বাস, এগুলোর ফিটনেস নেই। ফিটনেস আছে কি নেই এটা তিনি বললে হবে না। এটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী যে বাহিনী রয়েছে, তারা দেখবে, বিআরটিএ দেখবে। যদি না থাকে ব্যবস্থা নেবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২২
এসকে/এমজেএফ