ঢাকা: রমজান মাসে বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংসের ভ্রাম্যমাণ বিক্রি শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। মন্ত্রণালয় থেকে এ ভ্রাম্যমাণ বিক্রির সব কার্যক্রম নিয়মিত মনিটর করা হবেউল্লেখ করে তিনি বলেন, কম মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংসের ভ্রাম্যমাণ বিক্রির পদক্ষেপ এর আগে কেউ নেয়নি।
মন্ত্রী বলেন, রোজার মাসে একজন লোকও যাতে কোনভাবে কষ্ট না পায় সে লক্ষ্যে এ কার্যক্রম চালু করেছে সরকার। একই সঙ্গে রমজানে অধিক মুনাফার লোভ থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান তিনি।
রোববার (৩ এপ্রিল) রাজধানীর ফার্মগেটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর চত্বরে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংসের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বেইলি রোডের সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত হয়ে তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, রোববার (৩ এপ্রিল) থেকে ২৮ রমজান পর্যন্ত রাজধানীর ১০টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ এ বিপণন কার্যক্রম চালু থাকবে। প্রাথমিকভাবে সচিবালয় সংলগ্ন আব্দুল গণি রোড, খামারবাড়ি গোল চত্বর, জাপান গার্ডেন সিটি, মিরপুর ৬০ ফুট রাস্তা, আজিমপুর মাতৃসদন, নয়াবাজার, আরামবাগ, নতুন বাজার, কালশী এবং যাত্রাবাড়ীতে ভ্রাম্যমাণ বিপণন ব্যবস্থা চালু করা হবে। মাংস, দুধ এবং ডিমের সরবরাহ বৃদ্ধি ও সাপ্লাই চেইন সচল রেখে রমজান মাসে বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখা আমাদের লক্ষ্য। চাহিদা ও দ্রব্যের সরবরাহ বিবেচনা করে এ কার্যক্রমের পরিসর বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।
তিনি বলেন, প্রতিটি ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে পাস্তুরিত তরল দুধ প্রতি লিটার ৬০ টাকা, গরুর মাংস প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, ড্রেসড ব্রয়লার প্রতি কেজি ২০০ টাকা এবং ডিম প্রতি হালি ৩০ টাকা দরে বিক্রি করা হবে। ভ্রাম্যমাণ বিপণনে ব্যবহৃত পরিবহনগুলোতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ মানুষকে নিরাপদ খাবার পৌঁছে দেওয়া সাংবিধানিক দায়িত্ব। কোনভাবেই যাতে খাবারে ভেজাল না আসে, খাবার যাতে মেয়াদোত্তীর্ণ, অস্বাস্থ্যকর বা জীবাণুযুক্ত না হয় এই বিষয়টিতে খামারিদের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। খাবার যাতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিক্রি না হয় সে বিষয়টিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, গত বছর রমজান মাসে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং ডেইরি ও পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংসের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় ব্যবস্থায় ৩৪ কোটি ৮৫ লাখ ৮৬ হাজার ৪৭ টাকার পণ্য বিক্রয় হয়েছে। এর মাধ্যমে ৪৭ লাখ ৩১ হাজার ৩১০ জন ভোক্তা এবং ৮১ হাজার ৩৭৭ জন খামারি সরাসরি উপকৃত হয়েছেন।
করোনায় প্রাণিসম্পদ খাতের খামারি ও উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, কোন কোন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে ভ্যাট-ট্যাক্স মওকুফের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে সরকার কোটি কোটি ছাড় দিলেও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় জড়িতরা লাভবান হয়েছেন। প্রাণিসম্পদ খাতের উৎপাদন, পরিবহন, বিপণন সবকিছু স্বাভাবিক রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি। করোনায় দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার গতি কোনভাবেই যাতে স্থবির না হয়ে পড়ে সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. আব্দুর রহিম। এছাড়া বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন ও বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের সভাপতি মশিউর রহমান, অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তৌফিকুল আরিফ ও এস এম ফেরদৌস আলমসহ মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩,২০২২
জিসিজি/এমএমজেড