ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঢাকা-ওয়াশিংটন একযোগে পথচলার ৫০ বছরপূর্তি

তৌহিদুর রহমান, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০২২
ঢাকা-ওয়াশিংটন একযোগে পথচলার ৫০ বছরপূর্তি

ঢাকা: বাংলাদেশ- যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে ৪ এপ্রিল। ১৯৭২ সালের এই দিনে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

তারপর থেকে দুই দেশের মধ্যে বহুমুখী সহযোগিতার সম্পর্ক বিস্তৃত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, সামরিক, শিক্ষা, কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ইত্যাদি সহযোগিতা বেড়েছে।

কোভিড-১৯ প্রতিরোধ সহযোগিতা

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। এ পর্যন্ত ৬ কোটি ১০ লাখেরও বেশি টিকা বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশকে দেয়া টিকা উপহারের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষে অবস্থান করছে। এছাড়াও প্রায় ৯০ মিলিয়ন ডলারের চিকিৎসা সরঞ্জাম সহযোগিতা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

কৌশলগত সম্পর্কে আগ্রহ

ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে ধীরে ধীরে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক বাড়ছে। উভয় পক্ষ কয়েক বছর ধরে অংশীদারিত্ব সংলাপেরও আয়োজন করে চলেছে। সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো আরও ব্যাপক ও বিস্তৃত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে শুধুমাত্র অংশীদারিত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাইছে না উভয়পক্ষ। এখন উভয়পক্ষই অংশীদারিত্ব থেকে বেরিয়ে কৌশলগত সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যেতে চায়।

উচ্চ শিক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী

উচ্চ শিক্ষায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের অন্যতম দেশ যুক্তরাষ্ট্র। ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা নিজেদের অবস্থান শক্ত করে নিয়েছে। প্রতিনিয়ত সেখানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৮ হাজার ৫৯৮ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। আর যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী পাঠানোর তালিকায় বাংলাদেশ এখন ১৪তম অবস্থানে রয়েছে। আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আরো বাড়বে বলে আশা করছে উভয়পক্ষ।

বাণিজ্য সহযোগিতা

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়ছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এছাড়া বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৭১৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছর দুই দেশের মধ্যে আরও বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বিজনেস কাউন্সিল চালু করা হয়েছে।

মানবাধিকার ইস্যুতে সরব যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যুতে বরাবরই সরব থেকেছে যুক্তরাষ্ট্র। কখনো কখনো এজন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের তুমুল সমালোচনাও করেছেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশের অধিকার, পোশাক শিল্প শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই সরব ছিল। সম্প্রতি বিচার বহির্ভূত হত্যার ঘটনায় র‍্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরব ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তাও দিয়ে আসছে দেশটি।

নিরাপত্তা-প্রতিরক্ষা সহযোগিতা
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাও ধীরে ধীরে বাড়ছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করছে উভয়পক্ষ। এছাড়া বাংলাদেশকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতাও দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তিতে ৪ এপ্রিল ওয়াশিংটনে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন জানিয়েছেন, এই বৈঠকে র‍্যাবের নিষেধাজ্ঞা, বঙ্গবন্ধুর খুনীর ফেরত ও রোহিঙ্গা সঙ্কট ইত্যাদি ইস্যুতে আলোচনা হবে।

দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। যুক্তরাষ্ট্র সুখে-দুখে সব সময় আমাদের পাশে আছে।

আগামীতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও বাড়বে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।

এদিকে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তিতে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্কে পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২২
টিআর/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।