বরিশাল: দিনমজুর সুমন খান ইফতারে পরিবারের সদস্যদের তরমুজ খাওয়াবেন, এই চিন্তা করে দোকানে এসেছেন। তবে তরমুজের দাম শুনে দমে গেলেন তিনি।
সাধ্যের সবটুকু দিয়ে সন্তানদের জন্য মৌসুমি ফলটি কিনে রওয়ানা দিলেন বাড়ির উদ্দেশে। বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকাল দিনমজুর সুমন বলেন, একটা তরমুজ কিনতে একঘণ্টা সময় খরচ করলাম। পাইকারি বাজার, খুচরা বাজার সবজায়গায় ঘুরছি। এত তরমুজ তারপরও একটা তরমুজ কম দামে জুটলো না!
তিনি বলেন, রোজার আগে যে দাম ছিল এহনও হেই দাম। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ব্যবসায়ীরা তরমুজ লইয়্যা বইছে, গোটা বরিশালে এত তরমুজ তাও দাম কমে নাই!
তৌহিদুল ইসলাম নামে এক চাকরিজীবী ক্রেতা বলেন, পাইকারি বাজারে পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে, সেখান থেকে কয়েক পা এগোলে খুচরা বাজারে কেজি হিসেবে বিক্রি করছে। ৫০ টাকা দরে যদি ৫ কেজির একটা তরমুজ কিনি, তাহলে খোসার দাম বাদ দিলে তরমুজের কেজি পরে ৭০-৭৫ টাকার মতো। ৫ কেজির তরমুজে অন্তত এক দেড় কেজি খোসা আছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা খোসার দাম ছাড়াই তরমুজ কিনছেন কিন্তু আমরা ক্রেতারা কিনছি খোসার দামসহ। আজ দেখলাম বাজারে সাংবাদিক ও প্রশাসনের লোক ঢোকায় তরমুজ পিস হিসেবেও বিক্রি হয়েছে। সেই সুযোগে আমিও দেড়শ টাকায় একটা তরমুজ কিনেছি। এটা কেজিতে কিনলে আড়াইশ টাকার দাম হতো।
ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের জিম্মি করে ফেলেছে। ব্যবসায়ীরা যেভাবে চাচ্ছেন ভোক্তারা সেই পথে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতিবাদ করেও লাভ নেই, হতে হবে লাঞ্ছনার শিকার।
অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা এড়াতে কেজিতে বিক্রি করাটাই ভালো। এছাড়া আড়তদারি, পরিবহন খরচ ও পথের চাঁদা দিয়ে দেড়শ টাকায় কেনা তরমুজ আড়াইশ টাকায় বিক্রি করতে পারলে কিছুটা লাভ হয়। সেক্ষেত্রে কেজিতে কিনলে পরতা ঠিক থাকে।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে আড়তদারি, বরিশাল নগরের পরিবহন ব্যয় যৎসামান্য। এছাড়া পথে কোথাও কোনো চাঁদাও দিতে হচ্ছে না। তাই দেড়শ টাকার তরমুজ আড়াইশ টাকায় বিক্রি জুলুমের সামিল।
অন্যদিকে ব্যবসায়ী আলমের দাবি, কেজি দরে তরমুজ কেনাবেচা হলে ক্রেতাদেরই লাভ। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ৫ কেজি ওজনের একটি তরমুজের দাম চাওয়া হলো ৭ কেজি ওজনের। আর তখন সেটা ন্যায্যদামে ক্রেতা পেলেন না। তবে ওজন দিয়ে তরমুজ কিনলে সঠিক মাপে সঠিক দামে কিনতে পারবেন ক্রেতারা।
ব্যবসায়ী আলম আরও বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীদের ঘরে তরমুজ পঁচতে পারে, ফেটে যেতে পারে। অর্থাৎ লোকসানের শঙ্কা রয়েছে। তাই সব চিন্তা করেই তরমুজ কেজিতে বিক্রি করছেন তারা। চাষিদের মতো একবারে যদি সব বিক্রি করে সিজনে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ঘরে ফিরতে পারতেন তাহলে কথাই ছিল না!
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চালতাবাড়িয়ার তরমুজ চাষি নান্না গাজী জানান, তারা ক্ষেত থেকে শতক হিসেবে আড়তদার ও পাইকারদের কাছে তরমুজ বিক্রি করেন। বর্তমানে মাঝারি থেকে বড় আকারের ১০০ তরমুজ ১৩ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা পিস প্রতি বিক্রি করলেও খুচরা বাজারে কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। এটা উচিত না, এতে মানুষকে ঠকানো হচ্ছে। আর বাজার ঠিক রাখতে প্রশাসনের উচিত মাঠ পর্যায়ে তৎপরতা বাড়ানো।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, বাজারে তরমুজ উঠতে শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন বাজারে বিক্রেতাদের প্রাথমিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে যেন তারা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি না করেন। আমরা জানি কৃষকরা তরমুজ শত হিসেবে বিক্রি করে থাকেন।
এবার বরিশাল বিভাগে বিগত দিনগুলোর থেকে তরমুজের আবাদের সাথে সাথে উৎপাদনও বেশি হয়েছে। ফলে বরিশাল নগরের রাস্তাঘাট-বাজারগুলো তরমুজে সয়লাব। ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বরিশাল নগরের পোর্ট রোডের ইলিশের মোকাম বিগত বছরগুলোর মতো তরমুজে সয়লাব হয়ে গেছে। বরিশাল থেকে প্রতিদিন সড়ক ও নদীপথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তরমুজ নিয়ে যাচ্ছেন পাইকাররা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২২
এমএস/এমজেএফ