যশোর: আজ ৪ এপ্রিল। যশোরের ইতিহাসে ভয়াল ট্রাজেডির দিন।
এ প্রসঙ্গে শহীদ অ্যাডভোকেট সৈয়দ আমীর আলীর ছেলে সাংবাদিক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন আলম বলেন, আমার বাবা ও তিন ভাইকে সেদিন নির্মমভাবে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির নাম ফলকে শহীদ আইনজীবীর তালিকায় আমার বাবার নাম রয়েছে। তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবী। স্বাধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও ‘শহীদ’ স্বীকৃতি পায়নি। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। আবেদনটি জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিলে (জামুকা) পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। যতদিন স্বীকৃতি না পাবো আন্দোলন চালিয়ে যাবো। ’
শুধু সৈয়দ শাহবুদ্দিন আলম নয়, তার মতো শহীদ পরিবারের সন্তান ও স্বজনরা তাদের স্বজনের শহীদ স্বীকৃতির দাবিতে বছরের পর বছর অপেক্ষায় রয়েছেন।
কিন্তু স্বাধীনতার ৫১ বছরেও মেলেনি সেই স্বীকৃতি। তাদের দাবি অবিলম্বে শহীদের স্বীকৃতি বাস্তবায়ন হোক।
জানা যায়, একাত্তরের ৪ এপ্রিল ভোরে পাকিস্তানি সৈন্যরা যশোর রেলস্টেশন মাদরাসায় নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটায়। মাদরাসার শিক্ষক ছাত্রসহ ২৩ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। শহীদদের মধ্যে মাদরাসার শিক্ষক ‘কাঠি হুজুর’ খ্যাত মাওলানা হাবিবুর রহমান, তাহেরউদ্দিন, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ, বরিশাল মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র কামরুজ্জামান, কাজী আব্দুল গণি, ছেলে কাজী কামরুজ্জামান, ভাই দীন মোহাম্মাদ, ভাই শিক্ষক আয়ুব হোসেন, যশোর জিলা স্কুলের শিক্ষক সাহিত্যিক আব্দুর রউফ, মাদরাসাছাত্র আতিয়ার রহমান, নওয়াব আলী, লিয়াকত আলী, আক্তার হোসেন, আমজেদ আলী পরিচয় শনাক্ত হয়। বাকিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
একইদিন যশোর শহরের ষষ্ঠীতলাপাড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক, সাবেক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট রহমত উল্লাহ এবং তার দুই ছেলে মোহাম্মদ আলী ও মোসাদ্দেক রহমত উল্লাহ, ক্যাথলিক গির্জার ফাদার মারিও ভেরনেসি, স্বপন পল বিশ্বাস, প্রকাশ বিশ্বাস, অনিল সরদার, পবিত্র বিশ্বাস, ফুল কুমারী তরফদার, মাগদালিনা তরফদার ও আঞ্জেলা বিশ্বাসকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে পাক বাহিনীর সদস্যরা।
একাত্তরের ৪ এপ্রিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নৃশংসতায় শহীদ হন কোতোয়ালি থানার কনস্টেবল আব্দুস সালাম খন্দকার, আকরামুজ্জামান, নরেন্দ্রনাথ, আব্দুল হাকিম ও নায়েক আব্দুস সালাম। তাদের পরবর্তীতে থানা চত্বরেই সমাহিত করা হয়।
সেদিনের বর্বর হামলা থেকে রেহাই পায়নি তৎকালীন যশোর জেনারেল হাসপাতাল। সেখানে ঢুকে হাসপাতালে কর্মরত চারজন সেবিকাসহ ১১ জনকে হত্যা করে পাক বাহিনী। তারা হলেন- সিরাজুল ইসলাম, সাকাওয়াত হোসেন, শাহ আলম ও চাঁন মিয়া। বাকিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এ শহীদদের হাসপাতালের নার্সিং ইনস্টিটিউটের দক্ষিণ পাশে গণকবর দেওয়া হয়। এছাড়াও যশোর শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ঢুকে অসংখ্য মানুষকে গুলি করে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী।
এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আফজাল হোসেন দোদুল বলেন, গণহত্যায় শহীদদের কবর সংরক্ষণে সরকারের প্রকল্প চলমান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব গণকবর চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করবে সরকার। গণহত্যার শিকার শহীদদের স্বীকৃতির দাবি দীর্ঘদিনের। এ দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন হওয়া উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২২
ইউজি/আরআইএস