ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মহালছড়ির অসহায় এক পরিবারের ৫ জনই প্রতিবন্ধী

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০২২
মহালছড়ির অসহায় এক পরিবারের ৫ জনই প্রতিবন্ধী

খাগড়াছড়ি: পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে পরিবারের প্রধানসহ ৫ জনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। এর মধ্যে ৪ সন্তানই বিরল রোগে প্রতিবন্ধী হয়েছে।

এখনও তাদের রোগ নির্ণয় হয়নি। পরিবারটি এখন চরম অভাব-অনটনের মধ্যে জীবনযাপন করছে।

ওই পরিবারকে পুনর্বাসনে সহায়তার হাত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে গ্রামবাসী। প্রতিবন্ধী পরিবারটি বসবাস করে খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার দুর্গম চৌংড়াছড়ি রোয়াজাপাড়া গ্রামে।  

ওই গ্রামের বাসিন্দা নিংপ্রুচাই মারমা ও আরেমা মারমা দম্পতির কোলজুড়ে জন্মগ্রহণ করেছিল এক কন্যাসহ ৫ সন্তান। জন্ম নেওয়ার পর বয়স ৮ থেকে ১০ বছরের মাথায় অসুস্থ হয়ে পড়ে ছেলে সন্তানরা। বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে একে একে ৪ ছেলে সন্তানই প্রতিবন্ধী হতে থাকে। অজ্ঞাত রোগে আস্তে আস্তে তাদের হাত-পা শুকিয়ে যায়। তাদের হাঁটা-চলায় সমস্যা হচ্ছে।  অসহায় বাবা নিংপ্রুচাই মারমা ছেলেদের স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে চিকিৎসা করালেও আর ভালো হয়ে উঠেনি। এখন উচিমং মারমা (১৮), থুইচানু মারমা (১৫), থুইসাচিং মারমা (১২) ও সুইসাচিং মারমা (৯); সবাই শারীরিক প্রতিবন্ধী। শুধু তাই নয়, এক দুঘর্টনায় আঘাত পেয়ে তাদের বাবা নিংপ্রুচাই মারমাও শারীরিক প্রতিবন্ধী হন।

উপার্জনকারী কেউ না থাকায় পরিবারটি এখন চরম অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছে।  সামান্য প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়ে সংসার চলছে না। গ্রামবাসীর দাবি, প্রতিবন্ধী পরিবারটির প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানো হোক।  

এদিকে শিশুরা প্রথমদিকে স্কুলে গেলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা আর যেতে পারছে না বলে জানান স্কুলের শিক্ষকরা। পরিবারের কর্তা নিংপ্রু চাই মারমা বলেন, শুরুর দিকে দুইজন সন্তান হলেও পরে আরও দুইজন সন্তান প্রতিবন্ধী হয়। আমার জমি ও ঘর কিছুই নেই। খুব কষ্ট করে দিন কাটাচ্ছি। সন্তানদের চিকিৎসাসহ আমাকে যদি একটু সহযোগিতা করা হয় তাহলে একটু শান্তিতে বাঁচতে পারতাম।  

রোয়াজাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বসুদেব চাকমা বলেন, নিংপ্রু চাই মারমার ছেলেমেয়েরা আমাদের স্কুলে পড়তো। কিন্তু একটা সময় গিয়ে দেখা গেছে এক এক করে পঙ্গু হয়ে গেছে। তারা এখন মানববেতন জীবনযাপন করছে।  অসহায় পরিবারটিকে যদি সরকারিভাবে পুনর্বাসন করা হয় তাহলে দু’বেলা খেয়ে শান্তিতে বাঁচতে পারবে।

খাগড়াছড়ির ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মিটন চাকমা বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে শিশুরা বিরল কোন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের যদি খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তাহলে শিশু ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে তাদের রোগ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মো. শাহজাহান বলেন, পাঁচজন প্রতিবন্ধীকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন করা দরকার। এ বিষয়ে যেকোনো সরকারি উদ্যোগ নিলে সামাজিক ও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবে পরিবারটি।

সরকারিভাবে তাদের সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে পরিবারটিকে রক্ষা করা হবে বলে আশাবাদী এলাকাবাসী।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০২২
এডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।