ঢাকা, রবিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

থেমে নেই সড়কে মৃত্যু, ৩ মাসে মেহেরপুরে নিহত ১৫

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২২
থেমে নেই সড়কে মৃত্যু, ৩ মাসে মেহেরপুরে নিহত ১৫

মেহেরপুর: মেহেরপুরের সড়কগুলোতে কোনোমতেই থামছে না মৃত্যুর মিছিল। মৃত্যুর মিছিলে প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে নানা বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশু।

জেলায় চলতি বছরের ৩ মাসে নিহত হয়েছেন ১৫ জন। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধ শতাধিক মানুষ।

বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন করা হয়েছে।

জানা যায়, মেহেরপুর সদর উপজেলার শালিকাতে সড়ক দুর্ঘটনায় আছিম (১৬) নামে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়। গত রোববার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাধাকান্তপুর-দারিয়াপুর গ্রামের গোরস্থানের সন্নিকটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আছিম মেহেরপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ শালিকা গ্রামের ছলিম বিশ্বাসের ছেলে ও স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র।

আগের দিন ২ এপ্রিল একই উপজেলার শোলমারী গ্রামে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে আহত হন পলাশ হাসান (১৬) ও তার অপর বন্ধু সাধন (১৬)। পলাশ হাসান মেহেরপুর সদর উপজেলার শোলমারী গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে।

গত ৩০ মার্চ মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের সদর উপজেলার পুরাতন দরবেশপুর এলাকায় সিমেন্ট বোঝায় ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান আশরাফুল ইসলাম নামে এক কৃষক। তিনি সদর উপজেলা পুরাতন দরবেশপুর গ্রামের আজিমুদ্দিনের ছেলে।

এর আগে ২৪ মার্চ সকালে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের পুরাতন দরবেশপুর এলাকায় বিকল সিমেন্টের ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে চলন্ত ট্রাকের চালক পাবনা জেলার সাথিয়া উপজেলার সলদানাচর গ্রামের হাসেম ব্যাপারীর ছেলে শাহাদত হোসেন (৪৫) ও তার সহকারী একই এলাকার নাগডেমরা গ্রামের মোজাহার আলীর ছেলে ফারুক হোসেন (৪২) নিহত হন।

গত ১০ মার্চ গাংনী উপজেলা শহরের বাসস্ট্যান্ডে ড্রাম ট্রাকের চাপায় আহত হয়ে মারা যান ইরা খাতুন (৪) নামে এক শিশু। নিহত ইরা খাতুন গাংনী থানাপাড়া এলাকার ইনামুল হকের মেয়ে।

৮ মার্চ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে একই উপজেলার গাংনী থানাপাড়া এলাকাতে লাইসেন্সবিহীন ইটভাটাতে অবৈধ ড্রাম ট্রাক্টর চাপায় কদর আলী (৪৫) নামে এক ভাটা শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। গাংনী ধানখোলা সড়কের আস্থা ইটভাটায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত কদর আলী গাংনী থানাপাড়া এলাকার মৃত লাড্ডু হোসেনের ছেলে। তিনি দুই সন্তানের জনক।

৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া রোডের বাঁশবাড়িয়া নামক এলাকায় ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের ধাক্কায় জিনিয়া (৮) নামে এক শিশু নিহত হয়। সে গাংনী মডেল মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী গাংনী পৌর এলাকার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের ফল ব্যবসায়ী জিনারুল ইসলামের মেয়ে।

২৩ ফেব্রুয়ারি মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা-বাড়িবাকা সড়কে মাটি বোঝাই ট্রাক্টরের ধাক্কায় নিহত হন ভনা (৫০) নামে একজন ভাটা শ্রমিক। তিনি সদর উপজেলার বাড়িবাঁকা গুচ্ছগ্রামের মৃত রেজাউল হকের ছেলে।

ওই দিন দুপুরে গাংনীতে টিকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ইজিবাইকের ধাক্কায় সাকিবুল ইসলাম শিলন (১৩) নামে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়। সাকিবুল ইসলাম শিলন গাংনী উপজেলার সহড়াতলা গ্রামের রাহাতুল ইসলামের ছেলে ও হাড়াভাঙ্গা এইচকেএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।

১৫ ফেব্রুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় আব্দুল জাব্বার (২৪) নামে নব বিবাহিত এক যুবক নিহত হন। আহত হন তার নববধূ সামিয়া খাতুন (১৮)। নিহত আব্দুল জাব্বার গাংনী উপজেলার রুয়েরকান্দি গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে।

৩ ফেব্রুয়ারি মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ-দর্শনা সড়কে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শহিদুল ইসলাম নামে একজন নিহত ও মহাব্বত হোসেনর নামের অপরজন আহত হন। নিহত শহিদুল ইসলাম মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান গ্রামের তাহেরুল ইসলামের ছেলে।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের মেহেরপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও জৈষ্ঠ সাংবাদিক তুহিন আরণ্য বাংলানিউজকে বলেন, সড়কে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের অভাব, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা, লাইসেন্স ছাড়া চালক নিয়োগ, পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে ওভারটেকিংসহ অদক্ষ চালকদের দ্বারা গাড়ি চালনা করা। সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে রিকশা ভ্যান, থ্রি-হুইলার ও অবৈধ যান চলাচল বেড়ে যাওয়া, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধে আইনের প্রয়োগ না থাকা, সড়ক ও মহাসড়কে মোটরসাইকেল এবং তিন চাকার গাড়ি বৃদ্ধি ও মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটির কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে।

সড়ক দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে সড়কে গরু ছাগল ও হাঁসের উৎপাত বন্ধ করতে হবে, সড়কও মহাসড়কগুলোর পাশে অবস্থিত হাটবাজার উচ্ছেদ করে সড়ক নিরাপদ করতে হবে। সঠিক ও নিয়মনীতি অনুসরণ করে চালকদের লাইসেন্স দিতে হবে, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জনতার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।  
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে বাংলাদেশ যে প্রচলিত সড়ক আইন আছে সেগুলোকের কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। দক্ষ চালকদের হাতে গাড়ি দেওয়ার পাশাপাশি সড়ক মহাসড়কগুলোও ভাল করে নির্মাণ করতে হবে। তবে শুধু আইন প্রয়োগ নয়, পাশাপাশি সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে। তাহলে আমাদের সড়কগুলো থেকে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

জেলা প্রশাসক ড. মো. মুনসুর আলম খান বাংলানিউজকে বলেন, মেহেরপুর জেলায় সাধারণত দু’ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। জেলাতে অবৈধ যান বিশেষ করে আলগামন নসিমন বা অন্য যানের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এছাড়া কিশোর বয়সে অদক্ষ ছেলেদের হাতে মোটরসাইকেল ছেড়ে দেওয়ার কারণে অতিরিক্ত দুর্ঘটনা ঘটছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও বিআরটিএ যৌথভাবে চেষ্টা করছে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে প্রচলিত আইনের প্রয়োগসহ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি আওতায় আনা। তবে শুধু আইন প্রয়োগ করে সড়ক দুর্ঘটনায় বন্ধ করা যাবে না। এজন্য সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।