ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের হত্যাকারী এবং আদালতের সাজাপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামি যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত চেয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস আইনমন্ত্রীর দপ্তরে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে তিনি একথা জানান।
আইনমন্ত্রী বলেন, আমার পক্ষ থেকে আমি ওনাকে পরিষ্কার বলেছি, আমর একটা দাবি আছে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের হত্যাকারী এবং আদালতের সাজাপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামি রাশেদ চৌধুরী সেখানে পালিয়ে আছে। তাকে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে।
‘তিনি যেটা বলেছেন, সেটা হচ্ছে, এটা তো একটা বার্নিং ইস্যু, এই ইস্যুগুলো ত্বরিৎ ফয়সালা করা উচিত। এই বিষয়টিতে আমাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ছায়া পড়ুক সেটা তিনি চান না। সেটা নিয়ে কিছু মডালিটির আলাপ হয়েছে। যেগুলো আমি এখন বলব না। সেই মডালিটি অনুযায়ী আমরা এগিয়ে যাব, সেটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ’
মার্কিন রাষ্ট্রদূত দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সাক্ষাৎ জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, অ্যাপয়েন্টমেন্ট চিঠিতে দুটো টপিক উল্লেখ ছিল। ওনারা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিলেন। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে তা হলো, আমি ওনাকে বলেছি- এই অ্যাক্ট করা হয়েছে সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। আমি ওনাকে এটা বলেছি, অনেক দেশের সংবিধানের তুলনায় আমাদের সংবিধান আলাদা। আমাদের সংবিধানে ফ্রিডম অব প্রেসকে আলাদাভাবে গ্যারান্টি করা হয়েছে ফান্ডামেন্টাল রাইটসের মাধ্যমে। ’
আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট কখনোই বাক-স্বাধীনতা বা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য করা হয়নি। এটা সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য করা হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখেছি এরমধ্যে কিছু অপব্যবহার হয়েছে। এ বিষয়ে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে কী পদক্ষেপ নিয়েছি, সেটাও উল্লেখ করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা যে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই-কমিশনারের অফিসের সঙ্গে বেস্ট প্র্যাকটিসের ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরামর্শক এসেছিলেন তার সঙ্গে যে আলাপ করেছি, সেগুলো উল্লেখ করেছি। এরপর মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমাকে বললেন, যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে আমাদের সহায়তা করতে চায়। আমি বলেছি, এটা অবশ্যই বিবেচনাধীন থাকবে।
প্রশিক্ষণের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের আইনজীবীদের যদি এ ব্যাপারে প্রশিক্ষিত করা যায়, তাহলে সেটা ভালো হবে। তারা যে জজ ও আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এসেছেন, সেটাও আমি উল্লেখ করেছি। আর যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা হচ্ছে মানব পাচার ট্রাইব্যুনালের কাজে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে অত্যন্ত সন্তুষ্ট, সেটা তিনি বলেছেন। তারা মানব পাচার বিষয়ে ওনারা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এটা অব্যাহত রাখবেন। আর সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ দেবেন তারা।
আরেকটা বিষয় আলোচনার মধ্যে ছিল জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের দায়ের করা একটি মামলা আছে। যেটা আদালতে বিচারাধীন। সেই বিষয়ে বলেছি, আদালত স্বাধীন, বিচার বিভাগ স্বাধীন। এ মামলায় প্রসিকিউশনের দায়িত্ব যাতে সঠিকভাবে পালন করে সেটা আমরা দেখবো। তিনি উল্লেখ করেছেন, দূতাবাস হয়তো তাদের একজন আইনজীবী সেখানে নিয়োগ করতে পারেন। সেই রকম একটা পারমিশন হয়তো চাইবেন। আমি বলেছি, সেখানে আমাদের কোন আপত্তি নেই।
শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে আইএলওর সঙ্গে কিছু বিষয় আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেক্ষেত্রে কী অগ্রগতি হয়েছে সেটাও আলোচনা করেছি। এছাড়াও দু’দেশের সম্পর্ক যাতে আরও দৃঢ় হয় সেটাই আমরা চেষ্টা করব সেই ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন আইনমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২২
এমআইএইচ/এনএইচআর