ঢাকা: হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড অ্যান্ড প্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান পলাশ হত্যার বিচার দাবি করেছে তার পরিবার।
শুক্রবার (৮ এপ্রিল) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
এ সময় মিজানুর রহমান পলাশের বাবা আব্দুস সাত্তার বলেন, আমার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে দিনাজপুর জেলার কোতোয়ালি থানার ডেপুটি রেজিস্টারের ব্লু-মুন স্টুডেন্ট হাউসের দ্বিতীয় তলার ২০২ নম্বর রুমে থেকে পড়াশোনা করে আসছিল। গত ১৮ মার্চ আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টায় মিজানুরের বন্ধু জানায় যে ওর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলা অবস্থায় ডিসকানেক্ট হয়ে যায় এবং ওর রুমে লোকের উপস্থিতির কথা বলে। তাই ওর বন্ধুরা আমাদের তাড়াতাড়ি ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে।
তিনি বলেন, আমরা ওর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করি, কিন্তু কিছুতেই যোগাযোগ করতে পারি না। কে যেন ওখান থেকে কল কেটে দেয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে রাত আনুমানিক ১২টার দিকে ইনচার্জ এবং ডিবি পরিচয়ে ফোন দিয়ে জানায় মিজানুর রহমানের অবস্থা ভালো না, আপনারা সবাই তাড়াতাড়ি চলে আসেন। এ বলে ফোন কেটে দেয় এবং হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলে।
মিজানুরের বাবা বলেন, আমরা সবাই ওখানে গিয়ে দেখি আমার ছেলে হাসপাতালের মর্গে আছে। আমরা ওর হাত ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং বাড়ির মালিকের ভাষ্য, আমার ছেলে সুইসাইড করে মারা গেছে। এরপর দরজা ভেঙে ওকে বের করা হয়েছে। একটা মানুষ সুইসাইড করলে গলাতে যেভাবে দাঁগ থাকার কথা, সেটা কিন্তু দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল না।
আব্দুস ছাত্তার বলেন, আমরা বিভিন্ন সোর্স থেকে ছবি সংগ্রহ করে দেখতে পেয়েছি যে ওর এক হাত বাঁধা ছিল এবং পা মেঝের সঙ্গে বাকানো ছিল। বাড়ির মালিক এবং প্রক্টর দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকার যে কথা বলেছিল বাস্তবে দরজা ভাঙার কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পাইনি। এমন কী সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যন্ত আমাদের দেখায়নি। মেসের ছেলেরা এ বিষয়ে কোনো প্রকার কথা বলতে রাজি হয়নি।
তিনি বলেন, বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা তখন স্পষ্ট বুঝতে পেরেছি যে এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমার ছেলেকে মেরে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। পরে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানাতে মামলা এবং জিডি করতে গেলে থানা মামলা ও জিডি নেয়নি। তাই আমরা পরে কোটের মাধ্যমে গত ২৭ মার্চ মামলা করেছি।
সংবাদ সম্মেলনে মিজানুর রহমান পলাশের বাবা বলেন, আমার ছেলে হত্যার সঠিক বিচার পাওয়ার লক্ষ্যে আপনাদের সব টিভি চ্যানেল ও নিউজ পেপারের মাধ্যমে সমস্ত তথ্য তুলে ধরার জন্য অনুরোধ করছি। সেই সঙ্গে প্রশাসন ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
আয়োজনে মিজানুর রহমান পলাশের মা হাছিনা পারভীনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত ১৮ মার্চ রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বাঁশেরহাট এলাকায় ‘ব্লু-মুন’ নামে একটি মেস থেকে মিজানুর রহমান পলাশ নামে ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০২২
এইচএমএস/আরবি