ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দু’বছর পর বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা: ব্যাপক প্রস্তুতি

সাজ্জাদুল কবির, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২২
দু’বছর পর বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা: ব্যাপক প্রস্তুতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: বাঙালির ইতিহাস-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে বাংলা নববর্ষ উদযাপন। পহেলা বৈশাখে রমনার বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনও ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে।

তবে গেল দু’বছর করোনার কারণে বড় পরিসরে আয়োজন করা যায়নি মঙ্গল শোভাযাত্রা। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় মঙ্গল শোভাযাত্রার বর্ণাঢ্য আয়োজনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবার অনুষদের সিনিয়র ব্যাচের তত্ত্বাবধানে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এবার দায়িত্বে রয়েছে ২২ ও ২৩তম ব্যাচ। প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের ইব্রাহিম খলিল আসমানী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের প্রস্তুতি চলছে। সময়মতো সব কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। প্রোডাকশনের কাজ চলছে। সেখানে থেকে আসা অর্থ শোভাযাত্রার কাজে ব্যয় করা হবে। করোনার পর এবার বড় পরিসরে শোভাযাত্রা উদযাপনের আশা করছি।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, অনুষদের প্রধান ফটকে শিক্ষার্থীদের তৈরি করা বিভিন্ন পেইন্টিং, মুখোশ বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও দাম সম্পর্কে দায়িত্বে থাকা শিক্ষার্থী জানালেন, দুই পাখি ২৫০, তিন পাখি ৩৫০, ছোট মুখোশ ৩০০, বড় মুখোশ ১৭০০ টাকা থেকে শুরু। এছাড়া একটি সরার দাম ১ হাজার, ছোট বাঘ ২০০, পেঁচা ২০০, ঝুলন্ত পাখি ৫০ করে বিক্রি হয়। একইসঙ্গে জয়নুল গ্যালারিতেও এসব পণ্য প্রদর্শনী ও বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে।

অনেকেই সেসব পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাছ, ময়ূর, পাখি, গুল্ম-জাতীয় উদ্ভিদের ছবি আঁকছেন। কেউ আবার তৈরি করা মুখোশের ওপর রং করছেন।

বরাবরের মতো বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি বা মোটিভ বানানো হচ্ছে শোভাযাত্রার জন্য। ২৩তম ব্যাচের রিমন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এবছর মাছ, পাখি, ঘোড়া ও টেপা পুতুলের কাঠামো বানানো হচ্ছে। আমরা সবাই মিলে এখানে কাজ করছি।  

মঙ্গলশোভাযাত্রা নিয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, এবারের প্রতিপাদ্য একটি প্রার্থনা সঙ্গীতের একটি অংশ। সেটি হল- ‘নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’। গানটির এই লাইন থেকে আমরা শুধু প্রথমের ‘তুমি’ শব্দটা বাদ দিয়েছি। আমাদের স্বাভাবিক জীবনের যে ছন্দপতন ঘটেছে, যত নেতিবাচক পরিস্থিতি এসেছে সেখান থেকে যেন আমাদের মুক্তি মেলে। একইসঙ্গে আগামীর দিনগুলো যেন মঙ্গলময় হয়। সেরকমটা চাই।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের কারণে চলাচলের পথ সরু থাকায় বাংলা নববর্ষ-১৪২৯ উদযাপনের জন্য অনুষ্ঠিতব্য মঙ্গল শোভাযাত্রার রুট পরিবর্তন করা হয়েছে। শোভাযাত্রা টিএসসি সড়কদ্বীপ থেকে বের করা হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রা স্মৃতি চিরন্তন হয়ে পুনরায় টিএসসিতে গিয়ে শেষ হবে। কোভিড-১৯ বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের জন্য মঙ্গল শোভাযাত্রায় জনসমাগম সীমিত রাখতে সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।

পহেলা বৈশাখে বেশ কিছু নির্দেশনা মানতে হবে। তার মধ্যে রয়েছে-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজিলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এছাড়া ক্যাম্পাসে নববর্ষের দিন সকল ধরনের অনুষ্ঠান বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর কোনোভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে। নববর্ষের আগের দিন ১৩ এপ্রিল বুধবার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধু নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেইট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন।

নববর্ষের দিন ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের রাজু ভাস্কর্যের পেছনে সোহওয়ার্দী উদ্যানের গেইট বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আগতরা সোহওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য চারুকলা অনুষদের সামনের ছবির হাটের গেইট, বাংলা একাডেমির সামনের সোহওয়ার্দী  উদ্যানের গেইট ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন এবং সোহওয়ার্দী উদ্যান থেকে প্রস্থানের পথ হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেইট, রমনা কালী মন্দির সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন।

আগতদের সুবিধায় হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠ সংলগ্ন এলাকা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা, দোয়েল চত্বরের আশে-পাশের এলাকা ও কার্জন হল এলাকায় মোবাইল পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হবে।

 বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০২২
এসকেবি/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।