খুলনা: খুলনায় গভীর নলকূপের সঙ্গে সাব-মার্সিবল পাম্প বসানোর প্রক্রিয়া বেড়েই চলেছে। নগরীতে অপরিকল্পিতভাবে বিকাশমান আবাসন প্রকল্প এবং নগরীতে অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজের জন্য ও সাব-মার্সিবল পাম্পের ব্যবহার বাড়ছে।
খুলনা মহানগরীর পানি সমস্যা ও ময়ূর নদ ব্যবস্থাপনা: আমাদের প্রস্তাবনা শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
শনিবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ খুলনার উদ্যোগে খুলনা প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক সুতপা বেদজ্ঞ বলেন, খুলনা মহানগরের সুপেয় পানির উৎস ও প্রাপ্যতা সম্পর্কে আমরা নগরবাসী মোটামুটি ওয়াকিবহাল। পনেরো বা ষোল লাখ নগরবাসীর জন্য প্রয়োজনীয় পানি বিশেষত সুপেয় পানি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাস হতে মে মাস পর্যন্ত এই সমস্যা ভয়ানক রূপে দেখা দেয়। যদি বৃষ্টি দেরিতে আসে তবে সমস্যা কাল দীর্ঘায়িত হয়। পৌরসভা হতে সিটি কর্পোরেশন এবং খুলনা ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হলে নগরবাসী স্বাভাবিকভাবেই আশা করেছিল, পানি সমস্যা সমাধান হবে। বিশেষ করে, মধুমতি হতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি এনে নগরবাসীকে সরবরাহ করার উদ্যোগ নিয়ে অনেক আশাবাদ প্রচার করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে দেখা গেল, ওই প্রকল্প নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি, উপরন্তু নরগরবাসীকে নোনা ও ময়লা-দুর্গন্ধযুক্ত পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। অথচ ওই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে (ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট) বছরের এপ্রিল-মে মাসে পানিতে নোনা উপস্থিতির কথা বলা হয়েছিল। বছর দশেকের ব্যবধানে ওই নোনার মাত্রা অনেক বেড়েছে। ওই প্রকল্পের আরও একটি বড় উদ্দেশ্য ছিল ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা, কিন্তু আমরা সেই লক্ষ্যও অর্জন করতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, সামর্থ্যবান নগরবাসী এখন নিজেরা নিজেদের উদ্যোগে সাব-মার্সিবল পাম্প বসিয়ে পানি সমস্যার সমাধান করছেন। আমরা সকলে জানি, পানির স্তর নিচে নামছে। এ বছর (২০২২) পানি দিবস (২২ মার্চ)-এর মূল বক্তব্যও ছিল ভূগর্ভস্থ পানি বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
তিনি বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির আধার টিকিয়ে রাখা এবং পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া রোধ করতে প্রয়োজন পানির রি-চার্জিং (পুনর্ভরণ) ব্যবস্থা বজায় রাখা। বৃষ্টি হলেই রি-চার্জিং-এর সুযোগ সৃষ্টি হয়। আর এই ব্যবস্থাটি টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন ভূউপরিভাগে যথেষ্ট সংখ্যায় জলাধার সংরক্ষণ করা। খুলনা শহরের ব্যক্তিগত এবং সামাজিক মালিকানার পুকুরগুলোর দু-একটি মাত্র টিকে আছে। নগরীর পূব পাশে রয়েছে ভৈরব ও রূপসা নদী। পশ্চিম পাশে ময়ূর নদ। এই নদটি দখল-দূষণের দাপট ও প্রবাহ না থাকায় শুকিয়ে মরতে বসেছে। এর কারণগুলো হচ্ছে নদের ওপর অপরিকল্পিত বাঁধ, ব্রিজ ও কালভার্ট তৈরি করা। এর সংযোগ খালগুলো দখল করে আবাসন প্রকল্প তৈরি করা, সংযোগ খালগুলো এই নদটি থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা এবং খালগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন (জলমহালের স্থানে কৃষি ডাঙ্গা জমি দেখানো) করে প্রকল্পে ব্যবহার করা। শোনা যাচ্ছে, এই নদটি খনন করা হবে। কিন্তু কবে, কোথায়, কীভাবে বা কোন কর্তৃপক্ষ এই খনন কাজ বাস্তবায়ন ও তদারকি করবে, তা অস্পষ্ট।
সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো-
মধুমতি নদীর পানি শুষ্ক মৌসুমে নোনা আক্রান্ত হয়, তা পানযোগ্য নয়, এমন অবস্থায় কেন ওই প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হলো? এই অদূরদর্শী প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে জনগণের ওপর বিদেশি ঋণের বোঝা বাড়ানোর জন্য দায়িদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
ময়ূর নদ সংরক্ষণে কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। নদটি খননের বিষয়ে কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। কী ধরনের কার্যক্রম, কারা এবং কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, এ সম্পর্কিত সকল তথ্য নগরবাসীর সামনে উপস্থাপন করতে হবে।
ময়ুর নদকে ঘিরে মিষ্টি পানির আধার গড়ে তুলতে হবে। ময়ূর নদের পানির বায়োলজিক্যাল স্ট্যাটাস নিরীক্ষণ করে পর্যায় ক্রমিক ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে পানিকে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে হবে।
নদের পাড়ের সকল অবৈধ স্থাপনা আইনগতভাবে উচ্ছেদ করতে হবে।
বর্তমানে খুলনানগরীর ৬০ শতাংশ পানি বিভিন্নভাবে ভূগর্ভস্থ থেকে তোলা হচ্ছে। এই পানি বিভিন্নভাবে অপচয় করা হচ্ছে। অপচয় এখনই কমিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি শুধুমাত্র পানের জন্য নির্দিষ্ট করতে হবে।
পানির যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের জন্য ওয়াটার রেগুলেটরি কমিশন গঠন করতে হবে।
সাব-মারসিবল পাম্প স্থাপনে বিধি-নিষেধ আরোপ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, গণসংহতি আন্দোলন জেলা আহ্বায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, অধ্যাপক অজন্তা হালদার, নারীনেত্রী মেরিনা যুথী, সাংস্কৃতিককর্মী শরীফুল ইসলাম সেলিম, নাগরিক নেতা অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ, মাসুদুর রহমান রঞ্জু, আফজাল হোসেন রাজু ও কে এইচ শাহীন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০২২
এমআরএম/এসআইএস