ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রোগীকে দেখতে দুর্গম গ্রামে চিকিৎসক, দিলেন উপহার

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২২
রোগীকে দেখতে দুর্গম গ্রামে চিকিৎসক, দিলেন উপহার পাহাড়ি গ্রামে পৌঁছে রোগীর দেখাভাল করছেন ডা. আবু হানিফ

কক্সবাজার: গলায় টিউমার ও ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে প্রায় প্রায় দেড় বছর আগে ঢাকার জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও হাসপাতালটির নাক কান গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো আবু হানিফের শরণাপন্ন হন বৃদ্ধ রহিমা বেগম (৬২)। খুব যত্নের সঙ্গে তার জটিল অপারেশন সম্পন্ন করেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ এই সার্জন।

পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন রহিমা বেগম। অপারেশন পরবর্তী সময়েও মোবাইল ফোনে রোগীর নিয়মিত খোঁজ-খবর নিতেন ডা. আবু হানিফ। এখানেই শেষ নয়। শুক্রবার (৮ এপ্রিল) রহিমা বেগমকে দেখতে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা সুখমনিয়া গ্রামে ছুটে আসেন তিনি। সঙ্গে রহিমা বেগমের জন্য উপহার স্বরূপ নিয়ে আসেন একটি শাড়ি।

শনিবার (০৯ এপ্রিল) বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠে এলে সবার কাছে প্রশংসিত হয়।

ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবু হানিফ যখন রামুর দুর্গম কচ্ছপিয়ার শুকমনিয়া গ্রামে যাচ্ছিলেন সে সময় তার সফরসঙ্গী ছিলেন সাংবাদিক ইকরাম চৌধুরী টিপু। সেখান থেকে ফিরে টিপু ফেসবুকে লেখেন, শুধু অপারেশন করেই ডাক্তারের কাজ শেষ নয়। অধ্যাপক ডা. আবু হানিফ তার রোগী রহিমা বেগমের শারীরিক অবস্থার নিয়মিত খোঁজ-খবর নিতেন।

“শুক্রবার সকালে বিমানে তিনি ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারের রামুর দুর্গম সুখমনিয়া গ্রামে ছুটে গেলেন রহিমা বেগমকে দেখতে। অপারেশন পরবর্তী তার শারীরিক অবস্থা এখন কেমন তা দেখলেন এবং রহিমা বেগমের সঙ্গে তার বাড়ির উঠানে দীর্ঘ সময় কথা বললেন। তাকে একটি শাড়ি উপহার দিলেন। আলহামদুলিল্লাহ রহিমা বেগম এখন সুস্থ আছেন। ’

সাংবাদিক টিপু আরও লেখেন, “একজন মানবিক ডাক্তারের পক্ষেই তা সম্ভব। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় অনেক ডাক্তারের কাছে তা সময়ের অপচয় এবং কল্পনাতীত বিষয়। একজন সাংবাদিক হিসেবে ডাক্তার আবু হানিফের মহানুভবতার দর্শনে নিজেকে গৌরবান্বিত বোধ করছি। ”

সাংবাদিক ইকরাম চৌধুরী এ প্রতিবেদককে জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকে বাড়িতে দেখে রীতিমতো অবাক হন রহিমা বেগম। ঢাকার অনেক বড় চিকিৎসক যে তাকে অপারেশন করিয়ে সুস্থ করেছেন, আবার বাড়ি ছুটে এলেন, সবমিলিয়ে রীতিমতো মুগ্ধ রহিমা বেগম। তাঁর স্বামী নজির হোসেন এবং তার ছেলে মেয়েরাও দারুণ খুশি।

রহিমা বেগম ওই এলাকার নজির হোসেনের স্ত্রী। তাদের তিন ছেলের মধ্যে মেঝ ছেলে বাড়িতে কৃষি কাজ করেন। বড় ছেলে চাকরি করেন এয়ারফোর্সে। আর ছোট ছেলে মোস্তফা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।

রোগীকে তার বাড়িতে দেখা যাওয়া প্রসঙ্গে ডা. আবু হানিফ বলেন, আমার কাছে যে রোগীগুলো আসে, যতই ব্যস্ততা থাকুক আমি চেষ্টা করি চিকিৎসা পরবর্তী সময়েও তাদের খোঁজ-খবর রাখতে।

বিশেষ করে জটিল অপারেশনের রোগীগুলো চলে যাওয়ার পরেও আমি ফলোআপে রাখি। বাংলাদেশের যে প্রান্তেই হোক না কেন, আমি সশরীরে গিয়ে তাদের দেখে আসার চেষ্টা করি। এর ফলে রোগীরা মানসিকভাবে দারুণ শক্তি পান, যোগ করেন তিনি।

রামু সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইজত উল্লাহ বলেন, এ ধরনের মানবিক দৃষ্টান্তগুলো সত্যি আশাজাগানিয়া। অবাক হই, সত্যিই বাংলাদেশে এমন চিকিৎসকও আছেন। তারা আছেন বলেই এই দেশ এখনো এভাবে টিকে আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০২২
এসবি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।