ঢাকা: ‘আজ সকালে সূর্য ওঠা সফল হলো মম/ ঘরে এলে ফিরে পরবাসী প্রিয়তম’। সত্যিই, আজ সকালে সূর্য ওঠা যেন আসলেই সফল হলো।
সকালে আয়োজন শুরু হওয়ার আগেই নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ আয়োজনে যোগ দিতে ছুটে আসে মানুষ। লাল-সাদা শাড়ি আর পাঞ্জাবি-ফতুয়ায় দলে দলে ভিড় করেছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। তাদের হাতে ছিল ফুল, মাথায় ফুলের টায়রা, গালে বৈশাখী আলপনা। বৈশাখের প্রভাতী এই আয়োজনে এসেছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যরিস্টার ফজলে নূর তাপস। কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বৈশাখ এবং বৈশাখ উপলক্ষে রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি। আমাদের এই সংস্কৃতির আরও প্রসার ঘটাতে হবে, আরও ছড়িয়ে দিতে হবে। এবার ছায়ানটের বর্ষবরণের এ অনুষ্ঠান সাজানো হয় ৩৭টি সঙ্গীত আয়োজন দিয়ে। এর মধ্যে পঞ্চকবির গান, ব্রতচারীদের ‘বাংলা ভূমির প্রেমে আমার প্রাণ হইল পাগল’, লোকগান ‘নাও ছাইড়া দে মাঝি, পাল উড়াইয়া দে’ প্রভৃতি গান রয়েছে। সঙ্গে ছিল আবৃত্তি-পাঠের মতো বিষয়গুলোও। এবারের পরিবেশনে অংশ নেওয়া শিল্পী সংখ্যা ৮৫ জন। ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুন প্রতিবছরই এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তবে এবার তিনি ৯০ বছরে পা দিয়েছেন, বয়সের কারণে কিছুটা দুর্বল। তাই সেভাবে কথা বলেননি। তবে গেয়ে শুনিয়েছেন।
আর সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ডা. মফিদুল হক বলেন, হৃদয়ে বাংলা নববর্ষকে ধারণ করে মানবিক সমাজ গঠনে আমাদের প্রাণিত করে বাংলা নববর্ষ। এই প্রত্যয়ের আহ্বানে অর্ধশতাধিক বছর ধরে সুর ও বাণীর আবহে রমনার বটমূলে আয়োজিত হচ্ছে বাঙালির মিলন মেলা। অতিমারির কারণে গত দুই বছর সামাজিকভাবে আমরা বন্দি হয়ে ছিলাম। সেই দুঃসময় কাটিয়ে এবার নব আনন্দে জাগার আয়োজন আমাদের। গত অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে দেশের অন্যতম প্রধান সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানটের আয়োজনে বর্ষবরণের সংগীতানুষ্ঠান হয়ে আসছে। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর এখানে এ অনুষ্ঠানে ছেদ পড়ে। ছায়ানটের আয়োজনে প্রথম রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখের সূর্যোদয়ের সময় সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। এরপর কেবল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বৈরী পরিবেশের কারণে অনুষ্ঠান হতে পারেনি। ২০০১ সালে এ গানের অনুষ্ঠানে জঙ্গিরা ভয়াবহ বোমা হামলা করলেও অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েনি। কিন্তু গত দুই বছর করোনা সংক্রমণের তীব্রতায় বটমূলে অনুষ্ঠান হতে পারেনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২২
এইচএমএস/এএটি