খাগড়াছড়ি: পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব বৈসাবি‘তে কয়েকশ বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গরয়া নৃত্য এক পরিচিত সংস্কৃতি। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম ত্রিপুরা সম্প্রদায়।
বৈসুক শুরু হয় বর্ষ বরণের আগের দিন থেকে। আর বৈসুক শুরুর এক সপ্তাহ আগেই সাধারণত গরয়া নৃত্যের দল বেরিয়ে পড়েন পাহাড়ের এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে। গরয়া নৃত্যটি ত্রিপুরাদের জনজীবনে বিজয় স্মারক হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়।
বৈসুকের অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকে কমপক্ষে ১৬ জনের ত্রিপুরা নারী-পুরুষ বেরিয়ে যান পাহাড়ি পল্লীতে। প্রতিটি ঘরের উঠোনে বিশেষ বৈশিষ্ট্যের গরয়া নৃত্য পরিবেশন করেন। শিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে বয়সী একজনের কাঁধে থাকে শুল। পতাকার মতো করে শুলে বাধা থাকে একটি খাদি। শুলটি যে ঘরের আঙ্গিনায় বসানো হবে, সেখানেই চলে বিচিত্র ও আনন্দঘন পরিবেশে গরয়া।
প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা গেছে, নৃত্যের উল্লেখযোগ্য অন্তত ২২টি মুদ্রার মধ্যে চাংখা কানাই, খলাপালনাই, মাইকিসিল নাই, তাকরু তাই নাই, তুলা কানাই, খুল খুক নাই, রিসু নাই, মাতাই খুলুমনাই প্রভৃতি পরিবেশন করা হয়ে থাকে। মেয়েরা রিনাই রিচাই, গলায় মুদ্রার মালা এবং ছেলেরা ধুতি মাথায় গামছা বাঁধেন।
বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক প্রভাংশু ত্রিপুরা বলেন, ১৫১৩ খ্রিষ্টাব্দে কুকি রাজের সঙ্গে ত্রিপুরা মহারাজা ধন্য মানিকের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে কুকি রাজ পরাজিত হন। যুদ্ধকালীন সময়টি ছিল চৈত্র সংক্রান্তি। তখন কুকিরা আরম্বর সহকারে গরয়া উৎসব করছিল। গরয়া হলো প্রেমের দেবতা, দুঃখ দুর্দশা দুর করে কল্যাণ ও মঙ্গল বয়ে আনে। প্রকারান্তরে তিনি মহাদেব। এদিকে ত্রিপুরা রাজাও মহাদেবের ভক্ত ছিলেন। তখন তিনি কুকিরাজকে যুদ্ধে পরাজিত করে তাঁর কাছ থেকে গরয়া দেবতা এনে ত্রিপুরা রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সেদিন থেকে তাঁর রাজ্যে এই গরয়া দেবতার পূজা উৎসব এবং নৃত্য উৎসব প্রচলন করেছিলেন। সেই থেকে গরয়া নৃত্য পরিবেশিত হয়ে আসছে।
মূলত গ্রামবাসীর কল্যাণ ও মঙ্গল কামনার উদ্দেশ্যেই হাজার বছর ধরে ত্রিপুরা সমাজে বিশেষ এই নৃত্যের মাধ্যমে গরয়া দেবতার প্রতি পূজা অর্চনা হয়ে আসছে। আর গরীব ধনী সব ত্রিপুরাই যেন এ পূজা করা থেকে বঞ্চিত না হন; সেজন্যই প্রতি ঘরে ঘরে গিয়ে গরয়া করা হয়।
গ্রামবাসীর কল্যাণ ও মঙ্গল কামনার উদ্দেশ্যেই হাজার বছর ধরে ত্রিপুরা সমাজে বিশেষ এই নৃত্যের মাধ্যমে গরয়া দেবতার প্রতি পূজা অর্চনা হয়ে আসছে। আর গরীব ধনী সব ত্রিপুরাই যেন এ পূজা করা থেকে বঞ্চিত না হন; সেজন্যই প্রতি ঘরে ঘরে গিয়ে গরয়া করা হয়। তিন পার্বত্য জেলার ত্রিপুরাদের গরয়া নৃত্যের ধরনে কিছুটা বৈচিত্র্যতা লক্ষ্য করা যায়। তবে ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক প্রথা এবং উৎসবের আমেজের মিল আছে অভিন্ন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২২
এডি/কেএআর