রাজশাহী: একটি দুইটি নয়; সুদীর্ঘ ছয় যুগের পথ চলা। ৭২ বছর ধরে নিজের পরিচয় ধরে রেখেছে ‘দিল্লির শাহী ফিরনি’।
প্রতিবেশী দিল্লির ঐতিহ্য বহন করে চলেছে প্রাচীন শহর রাজশাহীতে। অমৃত স্বাদের এই শাহী ফিরনি বারতা দিয়ে যাত্রা চলেছে এখন শত বছরের পথে। পবিত্র রমজান মাসে রাজশাহীর মানুষের কাছে ইফতারে সময় বাহারি পদের সঙ্গে দিল্লির এই শাহী ফিরনি যেন একদিন হলেও চাই-ই চায়।
রাজশাহী মহানগরীর ঐতিহ্যবাহী হোটেল রহমানিয়া ও তাদের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রহমানিয় প্লাস দিল্লির শাহী ফিরনির একমাত্র বিক্রেতা। এক নামেই যার পরিচিতি। তাই প্রতি বছর রমজান মাস এলে রহমানিয়ার শাহী ফিরনি ছাড়া এখানকার মানুষের ইফতারে যেন পরিপূর্ণতা আসেনা আজও।
রাজশাহী রেস্তরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ও ঐতিহ্যবাহী রহমানিয়া হোটেলের স্বত্ত্বাধিকারী রিয়াজ আহমেদ খাঁন বাংলানিউজকে জানান, ১৯৫০ সালে তার দাদা আনিসুর রহমান খাঁন ভারত থেকে সুস্বাদু এ খাবারটি রাজশাহীতে নিয়ে আসেন। এর রন্ধনশৈলী ও উপকরণ নিয়ে রাজশাহীতে এর প্রচলন শুরু করেন। এর সুবাদে রাজশাহীতে বসেই মানুষ দিল্লির স্বাদ গ্রহণের সুযোগ পান। সেই থেকে রাজশাহীতে এখন পর্যন্ত শাহী ফিরনির কদর এক রত্তিও কমেনি। যুগের পর যুগ ধরে স্বাদের ঐতিহ্য বহন করে আসছে দিল্লির এই শাহী ফিরনি। এভাবেই পার করছে ছয় যুগ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্বাদ গ্রহণ করে চলেছে রহমানিয়ার এই ফিরনির। সে সময় মূল্য ছিল মাত্র ছয় আনা। আর এখন এর দাম ৩০ টাকা। তবে স্বাদ ও যুগ হিসেবে এখনও তা অনেক কম।
রিয়াজ আহমেদ বলেন, দুধ, পোলাওয়ের চালের গুড়াসহ বিভিন্ন উপাদান দিয়ে এই শাহী ফিরনি তৈরি করার পর মাটির একটি পাত্রে করে জমিয়ে রাখা হয়। পরে তা বিক্রি করা হয়। তবে আগে প্রতিদিন পাওয়া গেলেও বর্তমানে রমজান ও বিশেষ অর্ডার ছাড়া এ শাহী ফিরনি তৈরি করা হয়না।
স্বাদ ও গুণে অতুলনীয় এই শাহী ফিরনির জন্য রাজশাহীর রোজাদারদের মধ্যে প্রচুর চাহিদা। তাই এই বছর প্রথম রমজান থেকেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে এই আইটেম। নাম-ডাক থাকায় ভারতের রাজধানীতেও এই ফিরনির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে উল্লেখ করে রিয়াজ আহমেদ খান।
জানতে চাইলে হোটেলের সেলসম্যান মো. কালু বাংলানিউজকে বলেন, রমজান মাসে শাহী ফিরনি তাদের সেরা আকর্ষণ। তবে এছাড়াও রমজান জুড়ে রহমানিয়া হোটেলে ইফতারের বিশাল আয়োজন রয়েছে। রহমানিয়ার ইফতারের প্রতি প্যাকেটে থাকছে- বুট, খেজুর, পেয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, জিলাপি, সামুচা, কলা, শসা, মুড়ি, কাঁচা বুট এবং নিমকপাড়া। যার মূল্য ৫০-৬০ টাকা।
এছাড়া খাসির তেহেরি হাফপ্লেট ৭০ টাকা, চিকেন বিরিয়ানী হাফপ্লেট ১০০ টাকা, কাচ্চি ১০০ টাকা, শিক কাবাব ৩০ টাকা, কাটি কাবাব ১৫ টাকা, চিকেন কাবাব ৩০ টাকা, চিকেন টিক্কা ২০ টাকা, চিকেন সাসলিক ২৫ টাকা, ক্রিসপি চিকেন ৬০ টাকা, গ্রিল চিকেন ৮০-৩২০ টাকা, শামী কাবাব ৫০ টাকা, সামুচা খাসির (কিমা) ৬ টাকা, শাহী পিয়াজি ৫ টাকা, কোপ্তা ৫ টাকা, ঘি দেওয়া স্পেশাল হালিম ৮০-১৪০ টাকা, খিচুরি ১৫ টাকা, সিঙ্গারা ৫ টাকা, হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানী ১২০-২০০টাকা, জিলাপি ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের ইফতার কেনাবেচা চলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২২
এসএস/এনটি