পঞ্চগড়: মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের বাসিন্দা বীর সৈনিক শহীদ মকবুল হোসেন। আর এই মকবুল হোসেনের নামে নামকরণ করা হয় গ্রামের এক সড়কের।
এদিকে খানা খন্দের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা তিন গ্রামের প্রায় কয়েক হাজার মানুষ। বিশেষ করে রাস্তার খারাপ অবস্থায় সমস্যার সম্মুখীন হতে দেখা গেছে প্রসূতি নারী ও বয়স্কদের।
স্থানীয়রা বলছেন, বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়ক থেকে দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ, পাঠান পাড়া, ও জামাদার গছ এই তিন গ্রামের মানুষের চলাচলের রাস্তা এটি। প্রায় ৪৮ বছর আগে সড়কটির নামকরণ করা হয় শহীদ মকবুল হোসেন সড়ক। শহীদের সম্মানে সড়কের নামকরণ করা হলেও আজও কাঁচা এবং বেহাল অবস্থায় রয়ে গেছে। তবে ইতোমধ্যে সড়কটির এক কিলোমিটার পাকা করা টেন্ডার পাশ হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কটির দেড় কিলোমটার রাস্তায় একাধিক স্থানে বড় বড় গর্ত। সেই গর্তে কাদাপানি ও ময়লা জমেছে। ভ্যান-রিকশা কিংবা মোটরসাইকেল ঠিকমত চলাচল করতে পারছে না। কিছুদূর যেতে না যেতেই যাত্রীদের নেমে পায়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে।
স্থানীয় মামুনুর রশিদ মামুন বাংলানিউজকে বলেন, দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ গ্রামের পশ্চিমে মহানন্দা নদী থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার শ্রমিক পাথর উত্তোলন করে এই সড়ক দিয়ে ট্রলিতে করে পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কে এনে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এছাড়াও সড়কটি দিয়ে তিন গ্রামের মানুষ চলাচল করে। কাচা রাস্তায় খানা খন্দের কারণে নিয়মিত চলাচলে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে পড়ছে।
এলাকাবাসীরা আরও জানায়, বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিতে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় গর্ত আর কাদায় পিচ্ছিল হয়ে থাকে। ফলে পা পিছলে পড়ে অনেকে আহত হয়। গ্রামের বৃদ্ধ, অসুস্থ, বয়স্ক অনেকে চলাচল করে এই রাস্তায়। স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের পায়ে হেঁটে চলতে হয়। বর্ষা মৌসুমে যান চলাচেলে প্রায় অযোগ্য এই রাস্তাটি। তাই রাস্তাটি দ্রুত পাকা করা হলে তিন গ্রামের মানুষের চলাচলের কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে।
জানা যায়, ১৯৭২ সালে গ্রামের লোকদের নিয়ে দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ গ্রামের বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনওয়ারুল হক ও মৃত জহিরুল হক মাস্টারের উদ্যোগে মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে শহীদ মকবুল হোসেনের নামে সড়কটির নামকরণ করা হয়।
সড়কটির বিষয়ে শিক্ষক আনওয়ারুল হক বাংলানিউজকে বলেন, শহীদ মকবুল হোসেন সড়ক মুক্তিযুদ্ধের সময়ের একটি স্মৃতিময় সড়ক। আমার ছাত্রজীবন এবং দীর্ঘ ৩৬ বছরের কর্ম জীবন সমাপ্ত হয়েছে। কিন্তু ছোট থেকে আজ পর্যন্ত সড়কটি যেমন ছিল তেমনই আছে। সড়কের এমন বেহাল যে মানুষের চলাচল করতেই কষ্ট পাচ্ছে। আমি জোর দাবি জানাচ্ছি সড়কটি যেন অবিলম্বে পাকা করা হয়।
দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা, বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন বাংলানিউজকে বলেন, আমি অনেক বার এই সড়কটি পাকা করার জন্য ঊর্ধ্বতন মহলে জানিয়েছি, নিজ উদ্যোগে গ্রামবাসীদের নিয়ে রাস্তাটি আনেকবার মেরামতও করেছি। এই ইউনিয়নের সব রাস্তা পাকা হয়েছে। আমাদের রাস্তাটি আগে পাকা হওয়া জরুরী ছিল।
পঞ্চগড় এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শামছুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, পাঠান পাড়া থেকে দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ রাস্তাটির এক কিলোমিটার উন্নয়নের জন্য সম্প্রতি ঠিকাদারের অনুকূলে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করি অক্টোবরেই কাজ শুরু হবে।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু বাংলানিউজকে বলেন, সড়কটির এক কিলোমিটার পাকাকরনের টেন্ডার ইতোমধ্যে হয়েছে। এতে এক কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। এতদিন করোনার জন্য কাজ শুরু করা যায়নি। তবে দ্রুত কাজ শুরু হবে। এবং বাকি আধা কিলোমিটার রাস্তা পরবর্তীতে হবে।
এদিকে প্রায় টেন্ডার পাওয়া ছয মাস শেষ হলেও এখনো কাজ শুরু করতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান কুদরত-ই খুদা মিলন বলেন, বর্তমানে কাজের টেন্ডারটি বাতিল করা হয়েছে। তবে কি কারণে বাতিল হয়েছে এটি আমার জানা নেই। পুরো বিষয়টি ইঞ্জিনিয়ার বরতে পারবে।
এদিকে আগামী বর্ষায় রাস্তাটির অবস্থা আরও খারাপ হবে বলে আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২২
এনএইচআর