ঢাকা, বুধবার, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৩০ বছর ধরে কাগজ কুড়িয়ে জীবিকা আজিজের!

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২২
৩০ বছর ধরে কাগজ কুড়িয়ে জীবিকা আজিজের!

পাথরঘাটা (বরগুনা): শরীরের চামড়ায় ভাঁজ পড়ে গেছে, দেখলেই মনে হবে বয়সের ছাপ, এ বয়সে কাজ তো দূরে থাক, থাকার কথা আরাম-আয়েশে। কিন্তু ব্যস্ততম শহরের কর্ম ব্যস্ত মানুষ সারাদিন কাজ শেষে সবাই যখন বিছানায় শুইয়ে পড়েন তখন সারাদিনের মতো রাতেও কাজ করছেন ৭৫ বছরের আজিজ খান।

বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত শরীর যেন আর চলে না। তারপরেও দীর্ঘ ৩০ বছর ধরেই দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি। পরিবারের ঘানি টানতেই তার এ পরিশ্রম। মানুষের অপ্রয়োজনীয় ফেলনা কাগজ কুড়িয়ে তা বিক্রি করে উপার্জন করে। তা দিয়েই দুজনের জীবন চলে।

আ.আজিজ খানের বাবার নাম মৃত মোখলেছ খান। বাড়ি পাথরঘাটা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। তার ৩ মেয়ে ও ২ ছেলে। এক ছেলে মৎস্য শ্রমিক আরেক ছেলে দিন মজুর। তিন মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলে নিজেদের সংসার চালাতেই কষ্ট হয়।

রাতে বাজারের ব্যবসায়ীরা সারাদিন কাজ করে বিছানায় শুইয়ে গেছেন ঠিক তখন আজিজ খানকে দেখা যায় কাগজ কুঁড়াতে। ঠিক এমন মুহূর্তে কথা হয় আজিজ খানের সঙ্গে।

আজিজ বলেন, এক সময় বড় মুদির দোকান ছিল তার, ভালোভাবেই চলছিল তাদের সংসার। এক পর্যায়ে দোকানের বাকি পরে যায়। আস্তে আস্তে ব্যবসায় ধস নেমে আসে। পরে নিজেও দেনা হয়ে পরলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। পরে শূন্য হাত হয়ে পথে নেমে পরেন তিনি।

বয়সের ভারে ঝুঁকির কাজ করতে না পারায় কাগজ কুঁড়াতে শুরু করেন। সেই কাগজ কুড়ানোই এখন তার উপার্জনের পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাগজ কুড়িয়েই ৩০ বছর কেটে গেল কিন্তু ভাগ্যের চাকা আর বদলায়নি।

তিনি বলেন, প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কেজি কাগজ কুড়িয়ে এক জায়গায় রাখেন। পরে তা প্রতি কেজি ১৮ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করেন। পৌর শহরের ফার্মেসি, মুদি মনোহারিসহ একাধিক দোকানের সারাদিনের ফেলে রেখে যাওয়া কাগজ কুড়ানোই আমার একমাত্র আয়ের উৎস। বৃদ্ধ বয়সে কষ্ট হলেও পরিবারের জন্য উপার্জন করতে হবে। না হলে উপোস থাকবে পরিবার।

তিনি আরও বলেন, এক ছেলে সাগরে মাছ ধরার কাজ করে আরেক ছেলে দিন মজুর। তাদের সংসার চালাতেই কষ্ট হয় আমাদের খবর কেমনে নেবে। প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকার কাগজ বিক্রি করতে পারে। এতেই কোন মতে দিন চলে তার। প্রতিদিনের উপার্জনের টাকা সংসারে খরচ করি আর বয়স্ক ভাতার টাকা দিয়া দুজনের ওষুধ বড়ি কিনি।

পাথরঘাটা ইসলামিয়া ফার্মেসির সত্ত্বাধিকারী মো. জাকির হোসেন বলেন, আজিজ চাচা অনেক বছর ধরে কাগজ কুড়ায়। আমার দোকান থেকেই অধিকাংশ কাগজ নিয়ে যায়। আমরাও মাঝে মাঝে তার কষ্ট দেখে আর্থিকসহ সার্বিক সহযোগিতা করি।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ বলেন, আসলে অভাব যাদের থাকে তারাই কেবল বুঝে কত কষ্টের। আজিজের এ বয়সে এমন কাজ করাটাও কঠিন। সরকারিভাবে যে সহযোগিতা পাওয়ার তা দেওয়ার চেষ্টা করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২২
এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।