হবিগঞ্জ: বোরো মৌসুমের শুরুতেই আবহাওয়ার বিরূপ আচরণে আতঙ্কিত হবিগঞ্জের কৃষকরা এখন কাকডাকা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ধান তোলার কাজে ব্যস্ত। হাওরজুড়ে চলছে ধান তোলার মহাযজ্ঞ।
জেলার বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে, সূর্য ওঠার আগে থেকেই ধান কাটার শ্রমিকরা মাঠে নামছেন। দুপুর পর্যন্ত ধান কেটে সন্ধ্যা অবদি কৃষকদের খলায় তারা ধানগুলো তুলে দিচ্ছেন। ধান ভাঙানো এবং শুকানোর কাজে কৃষকরা ব্যস্ত থাকছেন তাদের স্ত্রী-সন্তানরা।
লাখাই উপজেলার কৃষক নূর আলী বলেন, তিনি ৪০ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছিলেন। কালনী ও মেঘনায় আসা জোয়ারের পানিতে ১০ বিঘা ধান তলিয়ে গেছে। বাকি ৩০ বিঘা জমির ধান তোলার কাজে দিনরাত কাজ করছেন তিনি।
বানিয়াচংয়ের কৃষক তৌফিক মিয়া জানান, হাওরে অন্য কৃষকরা ধান কাটা শুরু করলেও তার জমিতে এখনও ৮০ শতাংশ পাকেনি। দুয়েকদিনের মধ্যেই কাটা শুরু করবেন এবং আগে থেকেই শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে রেখেছেন। কিছু ধান কাটবেন কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জের ৯টি উপজেলার হাওরে ৪৬ হাজার ৯৩০ এবং নন হাওর অর্থাৎ সমতলে ৭৫ হাজার ৪৪০ হেক্টর মিলিয়ে মোট বোরো আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে। এগুলো থেকে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭৯ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন।
জেলায় স্থানীয় ১৬ হাজার ২৩০ জন এবং বহিরাগত ৬ হাজার ৬৮০ জন মিলিয়ে মোট ২২ হাজার ৯১০ জন শ্রমিক প্রতিদিন ধান কাটছেন। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া ১৭৪টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার এবং ৩১টি রিপার দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। শ্রমিক এবং যন্ত্র মিলিয়ে প্রতিদিন ৪ হাজার ৪৪ হেক্টর জমির ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে। শুক্রবার পর্যন্ত হাওরে ৩৬ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে।
এদিকে, কয়েকদিনের জোয়ারে লাখাই উপজেলায় মেঘনা এবং কালনী নদীর পানিতে ৪ শতাধিক হেক্টর জমি তলিয়ে গেলেও কৃষি বিভাগ বলছে পানিতে তলিয়েছে ৯৫ হেক্টর জমির ধান।
হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক আশেক পারভেজ বলেন, নদীর পানি গত দু’দিন ধরে কমছে। আর বৃষ্টিপাত না হলে দ্রুত সময়েই ফসল ঘরে উঠবে। কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিকভাবে কৃষকদের কাছে আবহাওয়ার খবর পৌঁছে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২২
আরএ