ঢাকা: ছিনতাইয়ের জন্য রিকশা আরোহীদের টার্গেট করে মোটরসাইকেলে অনুসরণ করা হতো। সুবিধামতো জায়গায় গেলেই আচমকা পেছন থেকে এসে রিকশা আরোহীর ব্যাগ ছোঁ মেরে ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারী।
দামি মোটরসাইকেলে চড়ে দুজন মিলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ছিনতাইকাজ চালিয়ে আসছিলেন। তাদের সঙ্গে কোনো অস্ত্র না থাকায় বিভিন্ন চেকপোস্টে পুলিশ ধরলেও তারা সহজে পার পেয়ে যেতেন।
এই ছিনতাইকারী গ্রুপে যিনি মোটরসাইকেল চালাতেন তাকে বলা হয় ‘পাইলট’, তিনি পথঘাট চেনাসহ মোটরসাইকেল চালনায় দক্ষ। আর আরোহী হয়ে যিনি ব্যাগ টান দেওয়ার কাজটি করেন তাকে বলা হয় ‘ঈগল’।
রোববার রাজধানীর মগবাজার ও মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারী চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেফতাররা হলেন—লেলিন শেখ, আশরাফুল ইসলাম, জিল্লুর রহমান খান ও সাইফুল ইসলাম শাওন। তাদের কাছ থেকে ২টি মোটরসাইকেল, ছিনতাইকৃত ৩৪ লাখ টাকা এবং ৪ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে।
সোমবার (২ মে) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর মিরপুর এলাকায় রিকশাযোগে ১১ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে যাচ্ছিলেন এক সরকারি কর্মকর্তা। মিরপুর বাংলা স্কুলের কাছাকাছি এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে মোটরসাইকেলে আসা ছিনতাইকারীরা তার টাকা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যান। ঘটনার তদন্তে ডিবি জানতে পারে, এ ছিনতাইয়ে লেলিন শেখ ও আশরাফুল ইসলাম জড়িত।
এছাড়া, গত ১৪ মার্চ মিরপুর ১১ নম্বর সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে ৪ লাখ টাকা তুলে রিকশায় মিরপুর ১০ নম্বরের দিকে যাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। ইনডোর স্টেডিয়ামের সামনে থেকে একইভাবে ছিনতাইকারীরা মোটরসাইকেলে পেছন থেকে এসে টাকাভর্তি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এই ছিনতাইয়ে জিল্লুর রহমান ও সাইফুল ইসলাম শাওনকে শনাক্ত করা হয়।
পৃথক দুটি ঘটনায় পল্লবী থানায় দায়ের মামলার প্রেক্ষিতে রোববার (১ মে) পৃথক দুটি অভিযানে ওই চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ছিনতাইয়ের ঘটনা দুটি স্বীকার করেছেন। তাদের কাছ থেকে ওই দুটি ছিনতাইয়ের ১৫ লাখ টাকাসহ ৩৪ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট-বড় শতাধিক ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করেছেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার আশরাফুল ইসলাম ওরফে ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি ধানমন্ডির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে একটি টেক্সটাইল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। কোম্পানির মিনি ট্রাকচালক লেলিন শেখের সঙ্গে পরিচয় সূত্রে তিনি ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়েন। আশরাফের ছিনতাইগুরু লেলিন শেখ।
তিনি বলেন, এই ছিনতাইকারীরা দুজন করে দামি মোটরসাইকেলে করে টার্গেট নির্ধারণ করে ঢাকায় ঘুরে বেড়ান। এদের মধ্যে যারা মোটরসাইকেল চালান তাদের বলা হয় পাইলট, আর পেছনে বসে যারা ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যান তাদের বলা হয় ঈগল। তারা সঙ্গে কোনো অস্ত্র রাখেন না। তাই চেকপোস্টে তাদের পুলিশ আটকালে ছিনতাইয়ের ব্যাগ নিজের বলে পার পেয়ে যান। দিনের বেলা যারা ব্যাংক কেন্দ্রিক টাকা নিয়ে চলাচল করতেন তাদেরই টার্গেট করা হতো। কোন কোন এলাকায় সিসিটিভি নেই এবং ফাঁকা রাস্তা পেলেই টার্গেট ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যাগ বা দামি কিছু ছোঁ মেরে পালিয়ে যেতেন ছিনতাইকারীরা।
গ্রেফতারদের মধ্যে আশরাফ ও জিল্লুর পাইলট এবং লেলিন ও শাওন ঈগল বলে জানিয়ে ডিবি কর্মকর্তা আরও বলেন, আশরাফ পেশায় একজন ঈঞ্জিনিয়ার। বাকি তিন জনই বিভিন্ন সময় চালক হিসেবে কাজ করেছেন। মাদক সেবন ও ফুর্তি করতে বেশি টাকার আশায় সুযোগ পেলেই তারা নিয়মিত ছিনতাই করতেন। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া বাকি ১৯ লাখ টাকার বিষয়ে পরবর্তী তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, মে ০২, ২০২২
পিএম/এমজেএফ