যশোর: ‘প্রথমে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে পরবর্তীতে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ১৫ বছর বয়সী ছেলেকে হত্যা করেন পাষণ্ড নুরুল ইসলাম। বড় ছেলে রুহুল আমিনের মৃত্যু নিশ্চিত করেই বাড়ির পাশেই হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়ুয়া আট বছর বয়সী ছোট ছেলে আলামিনকেও হত্যার জন্য আনতে যান নুরুল ইসলাম।
রোববার (১৫ মে) গভীর রাতে যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের পূর্ব চাঁদপাড়া গ্রামে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
পরিবার জানিয়েছে, পারিবারিক কলেহের জের ও দুই ছেলেদের নামে থাকা সম্পত্তির দলিল ও নগদ এক লাখ টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য নিজ সন্তানকে হত্যা করেন পাষণ্ড নুরুল।
এ ঘটনায় অভিযুক্তকে আটক করেছে পুলিশ। আটকের পরে পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত নুরুল।
তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে পুলিশের কাছে বলেছেন, ‘আমি আমার ফাঁসি চাই’।
এদিকে বাবার হাতে ছেলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্বজনদের আজাহারিতে চাঁদপাড়া গ্রামজুড়েই শোক বইছে। সোমবার (১৬ মে) চাঁদপাড়া জামে মসজিদে রুহুলের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এদিন সন্ধ্যায় স্বামী নুরুলকে আসামি করে মামলা করেছেন স্ত্রী শান্তনা বেগম।
পুলিশ বলছে, মামলাটি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
নিহত রুহুল আমিনের মা শান্তনা বেগম বলেন, আমার স্বামী নেশাগ্রস্ত। নেশার টাকা জোগাড়ের জন্য তিনি জমি-গাছ বিক্রি করতেন। পরিবারের সম্পত্তি বিক্রির নেশায় এখন শুধু বসতবাড়ির ৬ শতক জমি ছাড়া কিছু নেই। তাই জমি বাঁচাতে ভাসুরদের সঙ্গে কথা বলে বসতবাড়ির সেই জমিটুকু দুই ছেলের নামে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছি। সেই ক্ষোভেই আমার স্বামী বিভিন্ন সময়ে আমাকে ও দুই ছেলেকে হত্যার চেষ্টা করেন। একাধিক বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলে আমাদের ওপর নির্যাতন শুরু করেন। শনিবারও (১৪ মে) আমাকে মারধর করেন। বিকেলে এই নির্যাতন থেকে আমাকে বাঁচাতে বড় ছেলে রুহুল আমার বাবার বাড়িতে পৌঁছে দেয়। স্বামী নুরুল মনে করতেন আমার ছেলেদের মারতে পারলে সম্পত্তির মালিক আবার তিনি হবেন।
কান্নাজড়িত কন্ঠে শান্তনা বেগম বলেন, ঘটনার দিন রুহুল নিজ ঘরে একা ঘুমিয়ে থাকার সময়ে তার বাবা নুরুল ছেলের বাম পায়ে বৈদ্যুতিক তার পেঁচিয়ে ইলেকট্রিক শক দেন। পরে গলায় গামছা পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করেন। বড় ছেলের মৃত্যুর পরে ছোট ছেলেকেও হত্যার জন্য মাদ্রাসা থেকে আনতে যায়। তবে, রাতে মাদ্রাসার হুজুর ছোট ছেলেকে না দেওয়ায় তাকে হত্যা করতে পারেনি। এর আগে, ছোট ছেলে আলামিনকেও মাদ্রাসা থেকে বাড়িতে এনে একাধিক বার হত্যার চেষ্টা করে তিনি ব্যর্থ হন।
বারবার মুর্ছা যেতে যেতে শান্তনা বেগম আরও বলেন, আমার স্বামী কোন কাজ করেন না। আমার এই ছেলে এত কম বয়সে বাপের দোষে হোল্ডিং মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেই সংসার চালাতো। যা টাকা দেয়, ওই টাকায় আমার ৪ জনের সংসার চলে। রোববার (১৫ মে) রাতে ফাঁকা বাড়িতে আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। ‘ইট্টু জমির জন্যি আমার সোনা বাচ্চারে মেরে দিল, ও বাপ না পাষণ্ড! আমি এখন কনে পাব আমার সোনারে। ’ আমি এই হত্যার বিচার চাই। ওর মত জঘন্য বাপ এই সমাজে বেঁচে থাকার দরকার নেই! ওর ফাঁসি চাই।
স্থানীয় ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ সোহরাব হোসেন বলেন, পারিবারিক কলহ আর সম্পত্তি নিজের নামে ফিরে পেতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সোমবার যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গ থেকে রুহুলের ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে জানাজা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করলে আরও তথ্য জানা যাবে।
এদিকে বাবার মুখেই সন্তান হত্যার স্বীকারোক্তি শুনে হতবাক এলাকাবাসী।
সকালে অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম আটক হওয়ার আগে এলাকার মানুষের সামনে তিনি বলেন, জমি বিক্রি করে ৪১ লাখ টাকা সংসারের পেছনে খরচ করেছি। এখন পরিশ্রম করতে পারি না। স্ত্রী ও ছেলে মিলে আমাকে নির্যাতন করতেন। ছেলেকে হত্যা না করে কোনো উপায় ছিল না। আমি আমার ফাঁসি চাই।
যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম জানান, পারিবারিক কলেহের জের ধরে নুরুল ইসলাম তার ছেলে রুহুল আমিনকে হত্যা করেছেন। এ ঘটনার দিন রুহুল নিজ ঘরে ঘুমিয়েছিল। এ সময় নুরুল প্রথমে ছেলের বাম পায়ে বৈদ্যুতিক তার পেঁচিয়ে ইলেকট্রিক শক দেন। এতে মৃত্যু না হওয়া পরে গলায় গামছা পেঁচিয়ে আধা ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেন নুরুল। খবর পয়ে পুলিশ নিজ বাসা থেকে নুরুলকে আটক করে। এ ঘটনায় স্বামী নুরুলকে আসামি করে মামলা করেছেন স্ত্রী শান্তনা বেগম। মামলাটি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
বাংলাদেশ সময়: ২২৫৪ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২২
ইউজি/এএটি