নেত্রকোনা: নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় প্রায় দেড় মাস ধরে এক বৃদ্ধকে নির্যাতন ও শিকলে বেঁধে ঘরে আটকে রাখার অভিযোগে তার স্ত্রী ও ছেলেকে আটক করেছে পুলিশ।
খবর পেয়ে শনিবার বিকেলে (২১ মে) বাংলাদেশ আইন সহায়তা কেন্দ্র ফাউন্ডেশন পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের মনাটিয়া গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী আবু মিয়া (৭০) বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মচারী ছিলেন। তার বড় ছেলের নাম সেলিম, মেজ ছেলে শাহীন ও ছোট ছেলের নাম মামুন। অবসরের পরে গ্রামের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন আবু মিয়া। অনেকবার তার ছেলেরা তাকে মারধর করেছেন। সবশেষ গত তিন মাস ধরে এলাকাবাসী ভুক্তভোগীকে দেখতে পাননি বলে জানান।
বাট্টা গ্রামের শান্তি খান বলেন, আবু মিয়া সুস্থ সবল মানুষ ও সামন্য একটু জমির মালিক। এ জমির জন্য প্রতিনিয়ত ছেলেরা তাকে মারধর করেন। আবু মিয়া ছেলেদের ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রায়ই বলেন, আমার সঙ্গে তোরা (ছেলেরা) এ রকম করছ, আমি জমি-জমা অন্যদের সাফ-কবলা করে দেব।
তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত ওই বৃদ্ধকে ছেলেরা ১০ বারেরও বেশি পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছেন। গত রমজান মাস থেকে শিকলে বেঁধে ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করেছেন ছেলেরা।
চকবাট্টা গ্রামের বুলবুল ভূঁইয়া নামে একজন জানান, আবু মিয়া দীর্ঘদিন ধরে এলাকার দোকানে যাওয়া আসার সময় বলতেন, আমার টাকা-পয়সা নাই। আমার গাছগুলো তোমরা কিনবা? প্রায় দেড় মাস ধরে তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। শনিবার তাকে তালাবদ্ধ ঘরে শিকলে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়।
ছেলে সেলিম মিয়া বলেন, বাবা চাকরি থেকে ১৯৯৩ সালে অবসর নেন। আমরা তিন ভাই ও দুই বোন। ছোট থেকে দেখছি বাবা মাকে নির্যাতন করেন। আমাদের মা সম্পত্তি বিক্রি করে কষ্ট করে ভাই-বোনদের লেখাপড়া ও বোনদের বিয়ের ব্যবস্থা করেন। বাবা সংসারের খোঁজ-খবরও রাখেন না। টাকা দিলেই অন্যদের দিয়ে দেন। বাবাকে অনেক বুঝিয়েছি, তুমি টাকা-পয়সা নিয়ে এ রকম কইরো না। মাসে মাসে আমরা পাঁচশ’ টাকা করে দিলেও তা বাবার একদিনের খরচও না, এ বলে চিল্লাচিল্লি করতে থাকেন। বাবার যদি একটু সুস্থ জ্ঞান থাকতো, তাহলে তার সঙ্গে এ রকম করতে হতো না।
বাংলাদেশ আইন সহায়তা কেন্দ্র ফাউন্ডেশন (বসাক) উপজেলা শাখার সভাপতি শাহ আলী তৌফিক রিপন জানান, ওই বৃদ্ধকে ঘরে বন্দি করে রাখার বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করেছি। স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং বৃদ্ধের পরিবার ও সন্তানদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। বৃদ্ধের ভবিষ্যৎ দিনগুলো যাতে ভালোভাবে কাটে ও তিনি যাতে এ ব্যাপারে আইনগত সাহায্য পান, সে দিকটি বিবেচনা করা হচ্ছে।
কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্ত্রী হামেদা আক্তার ও বড় ছেলে সেলিমকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত করে এ ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৪ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২২
এসআই