ঢাকা, শনিবার, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

দেশি ফলের মৌসুমেও কমেনি বিদেশি ফলের চাহিদা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৪ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২২
দেশি ফলের মৌসুমেও কমেনি বিদেশি ফলের চাহিদা

ঢাকা: দেশে উৎপাদিত ফল খাওয়াকে উৎসাহিত করতে বিদেশি ফলের আমদানির ওপর সরকার বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে। তবে, খুচরা বাজারে দেশি ও বিদেশে ফলের চাহিদার তারতম্য খুব বেশি নয়।

দেশীয় ফলের প্রায় ৬৫ ভাগই হয় মে, জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে।   প্রতি বছরের মতো এবারও মৌসুম শুরু হয়েছে তরমুজ দিয়ে। এরপরই এসছে সুস্বাদু লিচু,  আমও আসতে শুরু করেছে বাজারে। এছাড়া কাঁঠাল,  আমড়া, জামরুল, আমলকী, বরই ও আনারসেরও দেখা মিলছে। আর পেয়ারা, পেঁপে ও কলা সারা বছরই কম-বেশি পাওয়া যায়।

রাজধানীর নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, হাতিরপুল ও খিলক্ষেত কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে ল্যাংড়া ৮০ থেকে ১১০ টাকা, হিমসাগর ১০০ থেকে ১৩০ টাকা, লিচু ৩৫০-৪৫০ টাকা, পেঁপে ১২০-১৫০ টাকা প্রতিটা, আনারস ৫০ টাকা এবং পাহাড়ি আনারস ৭০ টাকা, দেশী ড্রাগন প্রতি কেজি ৩৫০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেয়ারার দামও বেড়ে ৯০ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

নিউমার্কেটের ফল ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন বলেন, দেশি ফলের মৌসুমে চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রিও বেশি হয়। তবে এ সময় বিদেশি আপেল, আঙ্গুর, কমলাও মোটামুটি বিক্রি হয়।

নিউমার্কেটে রাজু ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, মৌসুমি ফল বাজারে আসার পর থেকে আম, লিচু কিনছি। তবে দাম গত বছরের চেয়ে বেশি মনে হচ্ছে।

এদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবে দেশের রিজার্ভ সুরক্ষিত রাখতে এবং দেশি ফল উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার তৈরি করতে সরকার বিদেশি ফল আমদানির ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে। প্রতি বছর দেশে ফল আমদানির পেছনে গড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় হয়। বিদেশি ফল আমদানিতে অতিরিক্ত ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) আরোপ করা হয়েছে। এর আগে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কহার ছিল মাত্র ৩ শতাংশ।

সরকারের এ উদ্যোগের প্রভাব বাজারে পড়েছে সামান্যই। দাম বাড়লেও কমেনি বিদেশি ফলের চাহিদা।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতি কেজি বিদেশি ড্রাগন ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, আপেল ২০০ থেকে ২২০ টাকা, আঙ্গুর ১৯০ থেকে ২২০ টাকা, কমলা লেবু ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, বিদেশি মাল্টা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব ফলের দাম আমদানি শুল্ক বাড়ানোর পর গড়ে দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।

হাতিরপুল বাজারের কাঁচাবাজারের ফল ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, প্রতিদিন তারা ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার ফল বিক্রি হয়। এর মধ্যে মৌসুমের অন্য সময়ে বিদেশি ফল ৮০ শতাংশ বিক্রি হলেও এখন দেশীয় ফলের রমরমা মৌসুমেও এক-তৃতীয়াংশ বিদেশি ফল বিক্রি হচ্ছে।

জানা গেছে, দেশে ফলের যে চাহিদা, তার ৩৫ শতাংশ অভ্যন্তরীণ উৎপাদন দিয়ে মেটানো যায়। বাকি ৬৫ শতাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে আমাদের দেশে আপেল, কমলা, আঙুর, নাশপাতি, মাল্টা, চেরি, আনার, বরই, আম ছাড়াও বেবি ম্যান্ডারিন, পাম, নেকটারিন, কিউইর, সুইট মিলান, এবাকাডোর মতো কিছু অপরিচিত ফলও আমদানি করা হয়।

এদিকে চাহিদা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতি বছর বাড়ছে দেশি ফলের বাণিজ্যিক উৎপাদন। মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। দেশে এখন ৭২ প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে।

জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (এফএও) মতে, গত দেড় যুগে বাংলাদেশে প্রতি বছর সাড়ে ১১ শতাংশ হারে ফলের উৎপাদন বেড়েছে। কাঁঠাল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়, আমে সপ্তম। পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ অর্থবছরের (২০১৯-২০) উৎপাদন তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় ফলমূলের উৎপাদন ১ কোটি ২৩ লাখ টনে পৌঁছায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হার্টিকালচার উইং ও উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য মতে, প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ টনের বেশি আপেল, দেড় থেকে ২ লাখ টন কমলা, ৫০ হাজার টনের বেশি আঙুর আমদানি হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ফল আমদানির পরিমাণ ছিল মোট ৪ লাখ ৭৩ হাজার টন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, ২৯ মে, ২০২২
এনবি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।